
ব্যবসা নয় সেবাই তাদের লক্ষ
রংপুরে হাইপার টেনশন বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে অর্ধলক্ষ রোগীর
রংপুরে ধাপ এলাকা মানেই চিকিৎসা কেন্দ্রের মহাসমারহ। এখানে এক’শতক জমি কোটি টাকার উপরে দাম। এছাড়াও এই এলাকায় জামানত দিয়ে একটি বাড়ি ভাড়া নিতেও গুনতে হয় কোটি টাকার উপরে। সে এলাকায় নিজস্ব বাড়িতে আজ ১৫বছর ধরে বিনা টাকায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছেন হাইপার টেনশন রিসার্চ সেন্টার।
সুবিধাভোগী ও স্থানীয়রা বলছেন ধাপ এলাকায় নিম্ন থেকে শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক শত বে-সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য একটাই স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার নামে কাটেন জনসাধারণের পকেট। শুধু রংপুরেই নয় সারাদেশেই চিকিৎসা সেবার
একই
অবস্থা। চিকিৎসা দেয়া এখন আর সেবা নয়.চিকিৎসা কেন্দ্র মানেই’ অনেক লাভজনক ব্যবসা।
রংপুরে একমাত্র প্রতিষ্ঠান, হাইপার টেনশন রিসার্চ সেন্টার। যার প্রতিষ্টাতা ডা.মো.জাকির হোসেন ২০০৮সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত উচ্চ রক্তচাপ জনিত রোগীর বিনা টাকায় চিকিৎসা দিয়েছেন ৩১ হাজার ৭১১ জন এবং ডায়েবেটিসে আক্রান্ত ২ হাজার ৭৪৬ জন রোগীসহ মোট ৪০হাজার ৪৫৭ জনের চিকিৎসা দেয়া ছাড়িয়েছে।
নগরীর বাবুখাঁ এলাকার বাসিন্দা সুবিধাভোগী আন্জুয়ারা বেগম প্রতিবেদককে বলেন,আমি দীর্ঘদিন যাবত উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়েবেটিস রোগে আক্রান্ত ছিলাম,ভালো চিকিৎসা নেয়ার মতো আমার সামর্থ ছিলনা,
ডাঃ জাকির হোসেন স্যারের চিকিৎসা নেয়ার পর থেকেই আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ।
সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শফি প্রতিবেদককে বলেন, রংপুর অঞ্চলের রোগীদের কাছে আশীর্বাদ হচ্ছে হাইপার টেনশন রিসার্চ সেন্টার। ওই কেন্দ্রে ৪০টাকার নামমাত্র ফি নিয়ে ১৫ বছর ধরে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন তিনি। যা অনেক সুনামধন্য চিকিৎসাকেন্দ্রের থেকেও মানব সেবায় দৃষ্টান্ত ভূমিকা রাখছেন ডাঃ জাকির হোসেন।
শাপলা চত্বর এলাকার বাসিন্দা সালেক চৌধুরী বলেন, হাইপার টেনশন রিসার্চ সেন্টারে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ,নিম্নবিত্তসহ সব শ্রেণীর পেশার মানুষকে যেভাবে সামান্য খরচে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
প্রশংসায় পঞ্চমুখ সাফল্যর শিখরে পৌছানো রংপুর হাইপার টেনশন রিসার্চ সেন্টারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিজস্ব ৫ তলা ভবনে ২২০০ স্কোয়ার ফিট নিয়ে নির্মিত হাইপার টেনশন রিসার্চ সেন্টারে কর্মরত চিকিৎসক রয়েছেন
২৪ জন,এছাড়াও বিভিন্ন সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন আরো ৮৭ জন কর্মচারী। বিশাল এই জনবল নিয়ে মানবের স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত থেকে বীরমুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও অসহায় দুস্থ ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে
বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ থেকে রক্ষা পেতে নানা ধরনের পরামর্শ দেন চিকিৎসকবৃন্দ । সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিকট জানাগেছে, রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জাকির হোসেন বিগত ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসের ১৪তারিখে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু করেন। এখানে জনসাধারণের চিকিৎসা করতে ৩ মাসের জন্য ৫০টাকায় নিবন্ধন করে মাত্র ৪০টাকায় চিকিৎসা দিয়ে আসছেন প্রতিষ্ঠানটি। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়েবেটিস ছাড়াও অন্যান্য রোগের চিকিৎসাও দিয়ে থাকেন।
মানবিক চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন এই মহতী উদ্যোগ নেয়ার পিছনে কি কারন থাকতে পারে সে বিষয়ে সেখানকার স্থানীয় জন’মনে দেখা দিয়েছে নানান কৌতুহল সহ জল্পনা -কল্পনা। এবিষয়ে হাইপার টেনশন রিসার্চ সেন্টারের সিইও মোঃ আনোয়ার হোসেন প্রতিবেদককে বলেন,অধ্যাপক ডা জাকির হোসেন স্যার বাংলাদেশের একজন সুনামধন্য মেডিসিন চিকিৎসক। সর্বজন শ্রদ্ধেয় চিকিৎসক ও শিক্ষক ডাঃ জাকির হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন সার্ভিস ট্রেইনি অবস্থায় তার গর্ভধারিনী মাকে হারান। উচ্চ রক্তচাপ জনিত জটিলতা স্ট্রোকে আক্রান্ত এই রত্নগর্ভা মৃত্যুবরণ করেন। মা হারানোর শোক বুকে ধারণ করে এবং তার প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক ডাঃ এস.জি.এম চৌধুরী ও অধ্যাপক ডাঃ মুনীর উদ্দীন আহম্মেদ কর্তৃক অনুপ্রাণিত হয়ে অধ্যাপক ডাঃ জাকির হোসেন ডা.ওয়াছিম-ওয়ালেদা বহুমুখী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের অধীনে তার কর্মস্থল রংপুরে ২০০৮সালের ১৪ই নভেম্বরে প্রতিষ্ঠা করেন।
চিকিৎসক জাকির হোসেন দীর্ঘ ৩২বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা এবং মায়ের অকাল মৃত্যুর দু্ঃসহ স্মৃতি তাঁকে উচ্চরক্ত চাপে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মহৎ উদ্দীপনা জোগায়।
হাইপার টেনশন রিসার্চ সেন্টার রংপুরে প্রতিষ্ঠার পেক্ষাপট ও এই মহতী উদ্যোগ বিষয়ে অধ্যাপক ডাঃ জাকির হোসেন প্রতিবেদককে বলেন,১৯৮৫-৮৬ সালে ইন সার্ভিস ট্রেইনি শেষে দীর্ঘদিন প্রয়াত অধ্যাপক ডাক্তার এস.জি. এম চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হাইপার টেনশন সেন্টার ঢাকায় অবৈতনিকভাবে কাজ করি পরবর্তীকালে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি অধ্যাপক ডাক্তার মনির উদ্দিন আহমেদ আহমেদ দাতব্য চিকিৎসালয় সান্তান পাড়া পলাশ নরসিংদীতেও সম্পূর্ণ অবৈতনিক ভাবে কাজ করি। এই সময়ে গভীরভাবে মানব সেবার বিষয়টি অনুধাবন করতে পারি । এবং মানব সেবার মহান ব্রতকে ধারণ করে আমার বাবা-মায়ের স্মরণে প্রতিষ্ঠা করি ডাক্তার ওয়াসিম ওয়ালেদা বহুমুখী কল্যাণ ফাউন্ডেশন।
প্রথমে আমার পৈত্রিক নিবাস বগুড়া জেলার ধুনুট উপজেলার গোসাইবাড়িতে একটি ঘরে একজন এম বিবি.এস চিকিৎসকের মাধ্যমে গ্রামের অসহায় দুস্থ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু হয়। এছাড়াও দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ভিত্তি প্রদান বিভিন্ন উৎসবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রধান সহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ করতে থাকি। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আমার স্বপ্ন গড়া ডা. ওয়াছিম- ওয়ালেদা বহুমুখী কল্যাণ ফাউন্ডেশন
এ প্রতিষ্ঠানটি একসময় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। তিনি আরো বলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন সার্ভিস ট্রেইনি অবস্থায় অবস্থায় তার প্রিয় গর্ভধারিনী মা উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়েবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সেই থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে হাইপার টেনশন রিসার্চ সেন্টার নামক রংপুরে চালু করে অসহায় দুস্থ মানুষের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবেন। এবং যথাযথ ভাবে রংপুরে হাইপার টেনশন রিসার্চ সেন্টার পরিচালনা করে নিরীহ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে আসছেন।