মো:আছিফ মল্লিক
ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেতাগী ইউএনও’র সহকারি নাজিরের পাঁচ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচনে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকতার নাম অর্ন্তভুক্তকরন উৎকোচ পেয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকা। এছাড়া নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের যাতায়াত ভাড়া থেকে দশ শতাংশ টাকা কর্তন বাবদ পেয়েছেন একলাখ চৌষট্টি হাজার সাত শত টাকাসহ সর্বমোট পাঁচ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এনিয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও বঞ্ছিতদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, বরগুনা-২ (পাথরঘাটা, বামনা ও বেতাগী) আসনে সর্বমোট ৩৯ টি ভোট কেন্দ্র ৩৯ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ২৬৮ সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ৫৩৬ জন পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। বেতাগীতে সহাকারি রিটানিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের ‘নাজির’ শংকর চন্দ্র দেবনাথকে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত বছরে ২২ ডিসেম্বর নির্বাচনের দায়িত্ব পালনে দশ শতাংশ কর্মকর্তার নাশ বেশি রেখে ৪৩ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ২৯৪ জন সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ৫৮৯ জন পোলিং কর্মকর্তা প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। গত ৪ জানুয়ারি নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের চিঠি প্রেরণ করা হয়। এতে প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ১৬৪ কর্তকর্তা বাদ পড়েন। কিন্তু ইউএনও অফিসের নাজির শংকর চন্দ্র দেবনাথ তিন শতাধিক কর্মকর্তার নাম কেটে দিয়ে জনপ্রতি ৫০০ টাকা নিয়ে নতুন নাম অন্তভুক্ত করেন। এবিষয় বলইবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারি শিক্ষক (বিজ্ঞান) বিভূতি চন্দ্র বিশ্বাস বলেন,‘ এ যাবত ১২ টি নিবাচনে সহাকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছি। এ নির্বাচনে আমার দায়িত্ব পালনে নাম নেই কিন্তু যারা নাজির শংকরের সাথে ৫০০ টাকা দিয়ে যোগাযোগ করছে তাদের নাম নতুনভাবে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে।’ বিএলবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (ইংরেজি) রাজাংশু হালদার বলেন,‘ নাজির শংকর আমাকে ফোন দেয় যে, আমাকে নির্বাচনে দায়িত্ব দেওয়া হবে তারাতারি অফিসে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যোগাযোগ করেন। এরপর শংকর আমাকে তিনঘন্টা বসিয়ে রাখেন। পরে ১০০০ টাকার বিনিময় অন্য আরেকজন শিক্ষককে সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা করা হয়েছে।’
এদিকে দায়িত্ব পালনে জনপ্রতি প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সম্মাানী ভাতা দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার টাকা এবং দশ শতাংশ কর বাবদ কর্তন করে মোট ৭ হাজার ২ শত টাকা এর সাথে যাতায়াত ভাড়া ১০০০ টাকা সংযুক্ত সর্বমোট ৮ হাজার ২ শত টকার বিধান রয়েছে। যাতায়াত ভাড়া থেকে কোন কর কর্তনে নিয়মে নেই। কিন্তু ইউএনও অফিসের নাজির শংকর চন্দ্র দেবনাথ জনপ্রতি কর্মকর্তা কাছ থেকে যাতায়াত ভাড়া থেকেও অতিরিক্ত ১০০ টাকা কর কেটে নিয়েছেন। এ হিসেবে এই নির্বাচনে প্রিজাইডিং ৩৯ জন কর্মকর্তা , ২৬৮ জন সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ৫৩৬ জন পোলিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ৮৪ হাজার ৩০০ টাকা কেটে নিয়েছেন। এ বিষয় সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জহিরুল হক বলেন,‘ যাতায়াত ভাড়ায় কর কাটার নিয়মে নেই। কিন্তু করের নাম ১০০ টাকা বেশি কেটে নিয়েছে যা অন্যকোন উপজেলায় নেইনি।’
এবিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নাজির শংকর চন্দ্র দেবনাথ বলেন,‘ যার নাম বাদ পড়ে তিনিই অভিযোগ তুলেন। তেমন কোন অনিয়ম হয়নি।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সকলের সার্বিক সহযোগিতায় এই উপজেলার ৩৯ কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত কেউ অবহেলা করলে বা কোন প্রকার অনিয়মের প্রমান পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এবিষয উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি রিটানিং কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন,‘ লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ছবি: বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে কর্মরত নাজির শংকর চন্দ্র দেবনাথ।