
স্ট্যাফ রিপোর্টার:
পার্বত্য বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য হচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতা। এমন গুঞ্জনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরব হয়ে উঠেছে। যে মূহুর্তে আওয়ামীগ, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে উত্তাল দেশ, সেই মূহুর্তেই বান্দরবান জেলা পরিষদে ছাত্রলীগ নেতা এরফান কে সদস্য করার পায়তারাকারী কারা(?)। অনেকেই এমন প্রশ্নের তীর ছুড়ছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্ঠার দিকে। এখানকার বাসিন্দারা মনে করেন, এই উপদেষ্ঠা ছিলেন স্বৈরচার হাসিনা কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান। সেখান থেকে তাঁকে করা হয় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা। জুলুমবাজ, অত্যাচারি আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসিত করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভারত ‘র’ এর ক্রীড়ানক সুপ্রদীপ চাকমা চায়ছেন পার্বত্য তিন জেলায় বৈষম্যের দেয়াল শক্ত করতে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে প্রকাশিত, লামা উপজেলা ছাত্রলীগের ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহ-সম্পাদক ফাইতং ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ এরফান কে বান্দরবান জেলা পরিষদ এর সদস্য করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ লামা উপজেলা শাখার অনুমোদিত কমিটির একটি তালিকায় এরফান এর নাম সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে সক্রিয় এরফান সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র কাছেও প্রায়ই দেখা করার ছবি প্রচার হয় ফেসবুকে। কথিত আছে সে সময় হাসিনা প্রশাসন এরফানকে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র কক্সবাজার জেলায় চাকরি দেয়। এত এত গুঞ্জরনের পরেও তার বিষয়ে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ করেছেন কি(?)। এমন প্রশ্নও অনেকের মনে ঘোর পাক খাচ্ছে। অনেকেই মন্তব্য করছেন, সুযোগ সন্ধানী চতুর এই এরফান বিগত জুলাই বিপ্লবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন। এর আগে বহুরুপী এরফান শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে এমরান এইচ সরকারের সাথেও তাকে দেখা যেতো। জানাগেছে, বিগত কযেক সপ্তাহ আগে উপদেষ্ঠা সুপ্রদীপ চাকমা বান্দরবান ভিজিটে আসেন। সে সময় তিনি বিতর্কিত একজন ছাত্রলীগ নেতা এরফান এর নাম জেলা পরিষদ সদস্যের তালিকায় সুপারিশ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশাসনের নিকট অনুরোধ করে গিয়েছেন। প্রসঙ্গতঃ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে আল্টিমেটাম দিয়েছিল। গত ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করে শতশত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে যে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজে জড়িত আছে। এমন অবস্থায় বর্তমান সরকার ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং ওই আইনের তফসিল-২ এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। এই প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
তার আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীর মাঝে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করাসহ ওইসব নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছিল তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত, ৭২’র সংবিধান বাতিলসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৫ দফা ঘোষণা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে হাসনাত বলেন, “অনলাইনে সক্রিয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী মুজিববাদীদের বলতে চাই, আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা রাজপথে নেমে পুলিশ লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছি। মৃত্যুর ভয় আমরা পাই না। মৃত্যুর পরোয়া আমরা করি না। শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসিত করার স্বপ্ন ভুলে গিয়ে নিজেরাই বিচারের আওতায় চলে আসুন। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে আসব। আমাদের বিপ্লব শেষ হয়ে যায়নি। আমরা ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে পারলেও এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে পারিনি।” হাসনাত আব্দুল্লার এমন বক্তব্যের সারমর্ম নাগরিক সমাজ নিশ্চয় বুজেছেন। কিন্তু পার্বত্য তিন জেলায় আওয়ামীলীগের পেতাত্মা স্বৈরচার হাসিনার শক্তি সঞ্চারে কাজ করছেন সুপ্রদীপ চাকমা। বিষয়টি নিয়ে পার্বত্য বান্দরবানবাসীর মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন যে, বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা এরফানকে বাদ দিয়ে নির্দলীয় অন্য কোনো সমাজ সচেতন নাগরিককে সদস্য করা হোক।