কাজল মিয়া:
লাবণ্যময় এক রহস্যময়ী তরুণী। মাদারীপুরের সৈয়দা জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে দিবা। যার রূপ ও প্রেমের সাগরে ডুবেই প্রতারিত হচ্ছে দেশ-বিদেশের বহু যুবক। ভয়ঙ্কর সুন্দরী বহুরূপী দিবার প্রেমের ফাঁদে পড়ে সৌদি, কাতার, ওমান, দুবাই, মালয়েশিয়া, কানাডা, ইতালি, প্রবাসীসহ দেশে অবস্থানরত বিত্তশীল পরিবারের বহু যুবক হয়েছেন নিঃস্ব। ওই বহরূপী নারী মাদারীপুর জেলার ডাসার থানাধীন পুরাতন চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার শাওন আহমেদ-সাজেদা বেগম দম্পতির মেয়ে।
বর্তমানে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থানাধীন জিনজিরা এলাকায় নানার বাড়িতে থাকেন সৈয়দা জান্নাতুল ফেরদোস ওরফে দিবা। নানার বাড়িতে থেকেই করে বেরান একের পর এক অপকর্ম।
অভিযোগ উঠেছে, যিনি প্রেম ও বিয়ের নামে বহু পুরুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ-সম্পদ লুটে নেন, প্রতারণা-জালিয়াতি ও নিরীহদের মামলা দিয়ে হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের বিপদের মুখে ঠেলে দেন গুঞ্জন রয়েছে। জান্নাতুলের মূল টার্গেট দেশের সম্পদশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ও প্রবাসী যুবক। প্রথমে টার্গেট নিশ্চিত করে তিনি ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে নিজ দেহের সৌন্দর্য ও কথামালার মারপ্যাঁচে আটকে ফেলে যুবকদের।
সুকৌশলে ভিডিওকলের কিছু অংশ স্ক্রিন রেকর্ড রেখে যুবকদেরকে সামাজিকভাবে হেয় করার হুমকি দিয়ে তা অনলাইনে প্রকাশ করার কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা ।
সম্প্রতি সৈয়দা জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে দিবার বিষয়ে গত ৪ বছর ধরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশের) মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন ইতালি প্রবাসী এক যুবক। সে গাজীপুর সদর থানাধীন জাহিদুল ইসলাম জুম্মন।
ইতালি প্রবাসী জুম্মনের ভাষ্যমতে, ৪ বছর আগে দিবার সাথে ভিগো লাইভে প্রথম পরিচয়, এরপর মেসেজ, অতঃপর বন্ধুত্ব, দিনের পর দিন শুরু হয় অনলাইন চ্যাটিং। এরপর অডিও-ভিডিও কলে কপোথকথন, একপর্যায়ে তৈরি হয় প্রেমের সম্পর্ক। এরপর নানান কৌশলে টাকা চাওয়ার পালা। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন অজুহাতে বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় বিভিন্ন অংকের টাকা।
পরবর্তী বিয়ে করার প্রতিশ্রুতিতে হাতিয়ে নেয় আরও কয়েক লাখ টাকা। প্রবাসি যুবক জুম্মন আরও জানান, আমি দেশে ফিরে তাকে বিয়ে করবো এমন কথা শুনে মেয়েটি হঠাৎ করে আমার সাথে অনলাইনে চ্যাটিং বন্ধ করে দেয়। শুরু করে হুমকি-ধামকিসহ নানান তালবাহানা।
পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। চক্রটির মধ্যে মুনস্টার, ডন্টটোরি, গিবেল, সফটটোরি ইত্যাদি। এ চক্রটিকে ভারত থেকে চালানো হয় বলে জানা যায়। আর বাংলাদেশে এদের নিয়ন্ত্রন করে রাজধানীর গুলশান অভিজাত এলাকার আফরান নামের এক ব্যক্তি। অন্য দিকে এ চক্রটিকে পুরো সাপোর্ট করছে আমেরিকা প্রবাসি ইভেল গ্রুপের এক সদস্য। এদের মধ্যে আরও রয়েছে ঢাকার মালেহা, চট্টগ্রামের এলসা নামের এক কানাডা প্রবাসি।
প্রবাসি ওই যুবক আরও বলেন, দিবা প্রেম ও বিয়ের নাটক সাজিয়ে ৪ বছরে আমার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার যথেষ্ট প্রমাণ আমার কাছে আছে। বিয়ে ও প্রতারণায় অর্থ হাতানোর কাজে দিবাকে সহযোগিতা করেছেন বাংলাদেশে থাকা আরফান নামের আরেক প্রতারক চক্রের আরেক সদস্য।
অভিযোগ উঠেছে, আরফান নামের এই ব্যক্তি জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে দিবাকে দিয়ে সৌদি কাতার, ওমান, দুবাই, মালয়েশিয়া, ইতালি ও কানাডা প্রবাসীদের প্রেমকে পুঁজি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খাতির জমাতে সহয়োগীতা করতেন।
এ প্রতিবেদকের কাছে পাঠানো কিছু ডকুমেন্টসে দেখা যায়, অনলাইন অডিও-ভিড়িও কলে একে অপরের সাথে কথা বলছেন। বিকাশে টাকা পাঠানোর স্ক্রিনশটও রয়েছে।
প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় দেশে ফিরে মামলা করবেন বলে জানান জাহিদুল ইসলাম জুম্মন।
জানতে চাইলে, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আবদুল সালাম মিয়া (পিপিএম) এ প্রতিবেদককে জানান, এ নামের কোন মেয়েকে চিনিনা। আপনার কাছ থেকে এ মেয়ের নাম এই প্রথম শুনলাম। তবে ছেলের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দিলে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে সৈয়দা জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে দিবার সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ না নিলে তিনি এভাবে একের পর এক বহু পুরুষকে ফাঁদে ফেলে তাদের অর্থ-সম্পদ লুটে নেবে। অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার পূর্বক তার সব অপকর্ম তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি করেন প্রতারনার শিকার ইতালি প্রবাসী যুবক।