প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ৪:৩৬ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ১৬, ২০২৪, ৮:৩১ অপরাহ্ণ
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন শিল্পী,মান্না জাকির নাজাকাত।
চট্রগ্রাম ব্যুরো।গুনি সম্মাননার পাশাপাশি এবার আবার গ্রীন লিফের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন চট্টগ্রামের একমাত্র বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শিল্পী মান্না জাকির নাজাকাত। গুণী এই শিল্পীর কাছে জানতে গেলে,তিনি ঠিক কথাগুলো এভাবেই বলেন,, দেখুন গ্রীন লিফ শুধুমাত্র কর্পোরেট লেবেলের শো অ্যারেঞ্জ করে না,তারা শিল্পকলা কেন্দ্রীক কাজ করে দেখিয়েছে,এবং সেখানে গুণী সম্মাননা ও আমাকে দিয়েছিল।এবং আমার কাছে মনে হয়েছে যে গ্রীন লিফ এর যে প্রতিষ্ঠাতা তসলিম ভাই,সে বিচক্ষণতা রাখে সময়োপযোগী সে কাকে কিভাবে সম্মাননা প্রদান করবে শিল্পীদের সম্মান করার ধরনটা আমার বেশ ভালো লেগেছে তার জন্য শুভকামনা জানাই।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন শিল্পী,মান্না জাকির নাজাকাত।পারিবারিক ভাবে বেড়ে উঠা দুটি ভাষা,দুটি ভিন্ন স্বত্তা ও দুটো শৈল্পিক সংস্কৃতির আদলে।তার মা সৈয়দা নিগার সুলতানা ভারতের উত্তর প্রদেশের লাক্ষনাও সম্রাজের সম্ভান্ত্র শিয়া সুফি ভাবাদর্শের মুসলিম পরিবারের মেয়ে এবংবাবা মোহাম্মদ আবদুল মতিন প্রধান ছিলেন নোয়াখালীর রামপুর গ্রামের প্রধান বাড়ির একজন বাঙালি সুফি চিন্তাধারা পরিবারের সন্তান।নিগার ও মতিন দম্পতির ৪ সন্তানের মধ্যে মান্না জাকির নাজাকাত ৩য়।শৈশব থেকে তার বেড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে।মায়ের সংস্কৃতি,তার নানার লেখা শায়রী, মার্সিয়া সঙ্গীতের প্রতি গভীর অনুরাগে প্রথম স্বর সুর তার কন্ঠে ধারণ হয়।স্কুল জীবনে যুব সমাজের সামাজিক আন্দোলন স্কাউটিং করতে গিয়ে তাঁবুজলসার মহড়ায় অন্যাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম,যেমন নাচ,গান,অভিনয় ইত্যাদি দেখে তার ভিতরের শিল্পী স্বত্তা পুরোদমে জেগে উঠে।এরপর থেকে তাকে আর কেউ সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে পিছিয়ে রাখতে পারেনি।শুরু হয় তার নাচ ও গানের তালিম নেয়া।সর্বপ্রথম গানের তালিম নিয়েছেন,, প্রয়াত মুমতাজ কাওয়ালের কাছে,শেখেন কাওয়ালি রাগ প্রধান গান ধর্মীয় প্রার্থনা সঙ্গীত।বর্তমানে গান শিখছেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী সনজীব কুমার নাথের কাছে।মান্না জাকির নাজাকাত চট্টগ্রামে বহুমুখী প্রতিভার শিল্পী হিসেবে কয়েক বার সম্মাননা পেয়েছেন।
সংস্কৃতি পরিমণ্ডলে পদার্পণ করার পর পরই ২০০৭ সালে,বিউটিফিকেশন এর উপর কোর্স করেন। এন টিভি তে সাক্ষাৎকার চলাকালীন চিটাগাং উইমেন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মনোয়ারা হাকিম আলী, তার হাতের কাজ দেখে বেশ প্রশংসা করেন এবং বিউটি ফিকেশন এর একটি কোর্স তাকে গিফট করেন। তারপর থেকেই মান্না জাকির নাজাকাত কে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি।
মেকআপ করিয়ে যে টুকিটাকি ইনকাম করতেন সেটা দিয়ে তিনি নৃত্যশেখা শুরু করেন। প্রথম নৃত্য শেখা হাতে খড়ি,চট্টগ্রামের সুনামধন্য ওড়েষী নৃত্যশিল্পী গুরু প্রমা অবন্তীর কাছ থেকে।
ওডিসি নৃত্য শেখা কালীন,তার ভরতনাট্যম নৃত্য খুব ভালো লেগে যায়।ওড়িশি নৃত্যের পাশাপাশি মান্না জাকির নাজাকাত ভরতনাট্যম শেখার ও তালিম নেওয়া শুরু করেন। চট্টগ্রামের স্বনামধন্য ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী গুরু শুভ্রা সেনগুপ্তর কাছে।এভাবেই ৫,৬ বছর নৃত্য শিখতে শিখতে,শিল্পকলার চার বছরের নৃত্য কলার কোর্স টি ও সম্পূর্ণ করেন।
ভাগ্যবশত ভারত থেকে আগত কালার পাইটট্টু গুরু কাজল হাজরা,ওয়ার্কশপে যোগ দেন। এবং সেখানে তার চোখে পড়ে যান।এরপর শ্রী কাজল হাজরা তাকে কলকাতায় যাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ জানান।এবং সেই নিমন্ত্রনে মান্না জাকির নাজাকাত ২০১২ সালে। গুরু শিষ্য পরম্পরায় দুই বছরের একটি কোর্স শ্রী কাজল হাজরার বাড়িতে থেকে খেয়ে শিখে সম্পন্ন করে আসেন। বর্তমানে তার একটি নৃত্যকলা শেখানোর প্রতিষ্ঠান আছে। যার নাম নৃত্যভূমি। এবং তার প্রতিষ্ঠান থেকে এই পর্যন্ত শাস্ত্রীয় নৃত্য থেকে দুজন বাচ্চা জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছেন।বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশনে চেতনায় নজরুল প্রোগ্রামটিতে প্রতিমাসেই নৃত্য পরিবেশন করে থাকেন।
এই শিল্পী উল্লেখযোগ্য নৃত্যনাট্য তে কাজ করেছেন। শ্যামা,, চিত্রাঙ্গদা চন্ডালিকা,, চাঁদের পাহাড়। চট্টগ্রামের লোকগাথা আমেনা সুন্দরী।
এবং তার নিজের লেখা গল্পগ্রন্থ এবং ডিরেকশন দেওয়া নৃত্যনাট্য।
১বারামখানা,২.ছায়াময়ী মায়াময়ী,৩.ভাঙ্গা মালসায় আধখানা চাঁদ,৪.টানা হেঁচড়া ৫.ফুলকুমারি।মান্না জাকির নাজাকাতের শুধু নৃত্য এবং গানেই পারদর্শিতা সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ১৭ বছর ধরে মঞ্চ নাটকে কাজ করছেন। তিনি নিয়মিত ,, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক মোস্তফা কামাল যাত্রা অধীনে নাট্যাধার একটি থিয়েটার দলের সাথে কাজ করছেন। উল্লেখ্য যোগ্য মঞ্চ নাটকে কাজ করেছেন,,বগাকাইন,স্মৃতি ৭১,শিখন্ডি কথা,বধ্যভূমি,পন্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়।বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পী,, তার নিজের ড্রেস ডিজাইন হাউজ,, লাখনৌ ঘরানার সমস্ত ফ্যাশন রিলেটেড কাজগুলো নিজেই ডিরেকশন দিয়ে থাকেন।মান্না জাকির নাজাকাত,একুশে ফেব্রুয়ারি থিম বেইজ,, বাংলাদেশের খ্যাতিমান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এর পেজই মোনাক মাঠের ইন্টারন্যাশনাল ওডিসিতে কাজ করেছেন।এবং এই বছর,থিম বেইজ ক্রিয়েটিভ ভিডিও বানিয়েছেন নিজের লেখা গল্প ফুল কুমারী,, ভিডিও চিত্রের গল্পে,অভিনয়শিল্পী হিসেবে নিজে কাজ করেছেন এবং এটি তিনিই নির্দেশনা দিয়েছেন।এই শিল্পী সমাজের রূপান্তরকামীদের কে শৈল্পিক এবং নান্দনিকতার অঙ্গনে আহ্বান জানানোর জন্য নিজেকে রূপান্তরিত নারী হিসেবে বহুবার রূপসজ্জায় নিজেকে নির্মিত করেছেন।চট্টগ্রামের শিল্পাঅঙ্গনে থিয়েটার গ্রুপগুলোতে প্রায় সময়,নাটকের নৃত্যের ব্যবহার কর্মশালা করিয়ে থাকেন,, যোগব্যায়াম এবং কনটেম্পোরারি নৃত্যের উপরে।বিস্তার শিল্প উৎসব ও গথে ইনস্টিটিউট আয়োজনে ২০১৯ এ ক্রিয়েটিভ নৃত্য পরিবেশন করেছেন।
সম্মাননা পেয়েছেন গ্রুপ থিয়েটার উৎসব ২০১৮ ২০১৯।ফ্যাশন ফর লাইফ সিজন ৫,বিবি রাসেলের কাছ থেকে।গুণী সম্মাননা পেয়েছেন,, গ্রীন লাইফ ষষ্ঠ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন ২০২৩।গুণী সম্মাননা পেয়েছেন ফ্যাশন টুগেদার, ২০১৬।পেয়েছেন,নৃত্য ও অভিনয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কার।
Copyright © 2013 sorejominbarta.com. All rights reserved.