দেলোয়ার হোসেন
গত (০৯ ডিসেম্বর ২০২৩) তারিখ বিকালে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন শিমুলিয়া ইউনিয়নের বিক্রমপুর এলাকায় বংশাই নদীতে একটি অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন নৌ-পুলিশ ও র্যাবকে বিষয়টি অবহিত করে। পরবর্তীতে র্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ব্যবহার করে নদীতে ভাসমান অজ্ঞাত নারীর মৃতদেহটির নাম ও পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং নিশ্চিত হয় যে ভাসমান এই মৃতদেহটি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার রঘুনাথপুর দোলাপাড়া গ্রামের আব্দুল ওয়ারেছ এর মেয়ে রুবিনা খাতুনের। পরবর্তীতে র্যাব-৪ ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের সংবাদ দিলে তারা রাজধানীর আশুলিয়া এসে এই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে গত ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নৃশংস এই হত্যাকান্ডটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। উক্ত হত্যাকান্ডের প্রকৃত ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল আশুলিয়া থানাধীন টেংগুরী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের মূলহোতা ও প্রধান আসামি ১। এনামুল সানা (২৭), পিতা-আব্দুল গফুর সানা, ও তার সহযোগী ২। সোহাগ রানা (২৮), পিতা-আব্দুল খালেক গাজী, জেলা-খুলনাদের’কে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত হত্যাকান্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম রুবিনা খাতুন (২৪) নরসিংদী জেলার পলাশ এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকুরী করতেন। বিগত ০৬ মাস পূর্বে গ্রেফতারকৃত এনামুল এর সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিমের পরিচয় হয় এবং এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। গ্রেফতারকৃত এনামুল পরিবারসহ আশুলিয়া ভাড়া বাসায় বসবাস করতো এবং পূর্বে গার্মেন্টসে সুপারভাইজারের চাকুরি করতো। বর্তমানে সে ভাড়ায় নিজের মোটরসাইকেল চালায়। গ্রেফতারকৃত এনামুল প্রায়শই ভিকটিমকে অধিক বেতনে অন্যত্র চাকুরী দেয়ার মিথ্যা আশ^াস দিয়ে আশুলিয়ায় আসতে বলতো। গত ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ গ্রেফতারকৃত এনামুলের স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়ী খুলনার পাইকগাছায় চলে যায়। গ্রেফতারকৃত এনামুল ভিকটিম রুবিনা খাতুনকে সুযোগ বুঝে তার আশুলিয়া ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে এবং বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত তার বাসায় রাখে। বাসায় অবস্থানকালীন সময় ভিকটিম গ্রেফতারকৃত এনামুলকে বারংবার বিবাহের কথা বললে গ্রেফতারকৃত এনামুল ভিকটিমকে বিবাহ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এসময় বিবাহসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়া হয়। গত ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ বিকাল আনুমানিক ০৩.০০ ঘটিকায় ভিকটিম রুবিনা গ্রেফতারকৃত এনামুলকে পুনরায় বিবাহের কথা বলায় গ্রেফতারকৃত এনামুল ভিকটিমকে বিবাহ করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং প্রচুর রাগান্বিত হয়ে পড়লে উভয়ের মধ্যে বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত এনামুল ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমের মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং সে ভিকটিমের হাতে লেখা এনামুল নামটি মেহেদী দিয়ে ঢেকে দেয়।
গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায়, ভিকটিম রুবিনাকে হত্যার পর গ্রেফতারকৃত এনামুল কিভাবে ঘটনা ধামাচাপা দিবে সে বিষয়ে উপায়ন্ত না দেখে এনামুল তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু গ্রেফতারকৃত সোহাগকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবহিত করে তার বাসায় আসতে বলে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সোহাগ আনুমানিক রাত ০৮.০০ ঘটিকার সময় এনামুলের বাসায় আসে এবং ভিকটিম রুবিনার লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে নদীতে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রেফতারকৃত এনামুল ও সোহাগ রাত ০৩.০০ ঘটিকার সময় সম্মিলিতভাবে ভিকটিম রুবিনার মৃতদেহটি চাদর দিয়ে পেচিয়ে বাসার নিচে নামিয়ে আনে। পরবর্তীতে ভিকটিমের মৃতদেহ এনামুলের মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে রাখে এবং পিছন হতে গ্রেফতারকৃত সোহাগ লাশটি ধরে রাখে। গ্রেফতারকৃত এনামুল মোটরসাইকেল চালিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আনুমানিক ০৫ কিঃ মিঃ দুরত্বে বংশাই নদীর উপর রাঙ্গামাটি ব্রীজে পোঁছায় এবং পরিকল্পনা মোতাবেক ভিকটিম রুবিনার মৃতদেহটি ব্রীজ হতে নদীতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে তারা নিজ নিজ বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করে। তাদের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মায় যে, যেহেতু তারা গোপনে লাশটি নদীতে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং ভিকটিমের লাশটি খুঁজে পাওয়া গেলেও তার হত্যাকারীকে সনাক্ত করতে পারবে না। সুতরাং তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হবে।