মোঃ আবদুল রহিম চৌধুরী, ফেনী জেলা প্রতিনিধিঃ
এনবিআর কর্মকর্তা মোহাম্মদ এনামুল হক।
ফেনীর সোনাগাজীতে এনবিআর কর্মকর্তা মোহাম্মদ এনামুল হকের কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। তিনি সিলেটের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার হিসেবে কর্মরত। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলার পর আলোচনায় আসেন এনবিআরের এই কর্মকর্তা।
তাঁর পৈত্রিক বাড়ি ফেনীর সদর ইউনিয়নের মনগাজী হলেও নতুন করে বাড়ি করেন পৌরসভার তুলাতলী এলাকায়।
আজ মঙ্গলবার ওই এলকায় সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, তাদের এলাকায় চারপাশে বাউন্ডারি দেওয়া চারটি বহুতল ভবন রয়েছে এনামুলের। যেগুলোর একটি পাঁচতলা, একটি দোতলা, আর দুটি তিনতলা বিশিষ্ট ভবন। তৃতীয় তলা বিশিষ্ট নুরে জান্নাত ভবনটি মেয়েকে দিয়েছেন এনামুল। সেখানে বাসা ভাড়ার খোঁজে গেলে বাড়ির কেয়ারটেকার জানান, এ সকল সম্পত্তির দেখাশোনা করেন এনামুলের ভগ্নিপতি শরিফ।
ফেনীর সোনাগাজিতে এনবিআর কর্মকর্তা এনামুল হকের সম্পত্তি। এ ছাড়াও সোনাগাজীর হাজী স্ট্যান্ড নামক এলাকায় ১২০ শতকের বাউন্ডারি দেওয়া জায়গা রয়েছে। যে সম্পত্তির বর্তমান মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। স্থানীয়দের দাবি, সরকারি চাকরি করে এত টাকার জমি ক্রয় অবৈধ উপায় ছাড়া সম্ভব নয়। হঠাৎ এতসব সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়া নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
এনামুলের মায়ের ভাষ্যমতে, সোনাগাজীর চরখোন্দকার মৌজার ১২০ শতাংশ সম্পত্তি ছাড়াও থাক খোয়াজ লামছিতে আছে ১২০ শতাংশ। যেটিতে ১০-১২টি সুবিশাল দিঘী রয়েছে।
এনবিআর কর্মকর্তা এনামুলের বহুতল বিশিষ্ট ভবন। এনামুলের মা ছলেয়া বেগম বলেন, ‘হের টেকাটা তো ওইভাবে আইছে। টেকার ডকুমেন্ট আছে না, আপনে কত দিছেন, ওই কত দিছে, বিদেশওয়ালা কত দিছে, দেশওয়ালারা কত দিছে। চিটাগংয়ে বাড়ি করছে, সেইটা সাড়ে ৩ কোটি টাকা বেচছে। আরও কিছু জায়গা হারাইছে-টারাইছে। হেতে (এনামুল) কি করে হেতে জানে।’
এনামুলের সম্পত্তি দেখাশোনা করেন তাঁরই ভগ্নিপতি শরিফ। এ বিষয়ে জানার জন্য সরেজমিনে গেলে শরীফ কথা বলতে রাজি হননি।
এ নিয়ে এনামুলের প্রতিবেশী ও সোনাগাজী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নুরুনবী লিটন বলেন, ‘এনাম ভাই আমার নিকটতম প্রতিবেশী। ভালো জানাশোনা আমাদের নাই। এলাকায় আসা-যাওয়া না করার ফলে তাঁর সাথে কারও সে রকম যোগাযোগ নাই। উনার সম্পত্তি আসলে কীভাবে, কার মাধ্যমে কিনেছেন নির্দিষ্ট করে বলা আমার পক্ষে কঠিন। তবে দুই-চার বছরের মধ্যে উনি ২-৪টি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সেটি উনার ভগ্নিপতিকে দেখাশোনা করতে দেখেছি। উনার বিভিন্ন জায়গায় যে অঢেল সম্পত্তি কীভাবে কার মাধ্যমে কিনেছেন তা আমি জানি না।’
ফেনীর সোনাগাজীতে এনবিআইর কর্মকর্তা এনামুলের দুইটি দোতলা বাড়ি। কাউন্সিলর আরও বলেন, ‘দুর্নীতির মাধ্যমে উনার অর্জিত সম্পত্তি দেখে আমরা অবাক, লজ্জিত, হতাশ ও ক্ষুব্ধ। আমরা চাইব এনাম ভাই হোক, মতিউর কিংবা যে কেউ হোক, সকল দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি হোক।’
উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় এনবিআর কর্মকর্তা মোহাম্মদ এনামুল হকের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেন ঢাকার একটি আদালত। গত বছরের ৩১ জুলাই এনামুলের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা অবৈধ আয়ের অভিযোগে মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম। চলতি বছরের ৫ জুন এ মামলায় কমিশনারেট অব কাস্টমস ভ্যালুয়েশন অ্যান্ড ইন্টারনাল অডিটের সাবেক কমিশনার এনামুলের সব স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ দেন আদালত।