ইফতেখার হোসেন, চট্টগ্রাম ব্যুরো- বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল, তারা সেটি আবার প্রমাণ করেছে। গত শুক্রবারের প্রোগ্রামে গন্ডগোল কেন হলো না সেজন্য বিএনপি নেতাদের উপর চটেছে তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গন্ডগোল করার উদ্দেশ্যে পরদিন ঢাকা শহরের প্রবেশ মুখগুলোতে অবস্থান ধর্মঘট অর্থাৎ অবরুদ্ধ করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। তারেক জিয়া নিজে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নেতাদের ফোন করে নির্দেশ দিচ্ছে গাড়ি ভাংচুর ও আগুন দেয়ার জন্য এবং পুলিশের উপর আক্রমণ করার জন্য। সেই প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। বিএনপি ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের মত আবারো পেট্টোলবোমা বাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে, অগ্নি সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য শুরু করেছে।
রোববার (৩০ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর দোস্ত বিল্ডিং চত্বরে বিএনপির অগ্নি সন্ত্রাস নৈরাজ্য সৃষ্টি ও সহিংসতার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম উত্তরজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ববর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আপনারা জানেন গত শুক্রবার ঢাকায় বিএনপি সমাবেশ করেছে, একই সাথে আমাদের যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ যৌথভাবে বিশাল সমাবেশ করেছে। মাত্র সোয়া কিলোমিটার দূরত্বে দুইটি বিশাল সমাবেশ হয়েছে, কিন্তু ঢাকা শহরে বিন্দুমাত্র কোন গন্ডগোল হয় নাই। কারণ আমাদের দলের নেতাকর্মীরা এবং প্রশাসন সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিল।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন বিএনপি নেত্রী নিপুন রায়ের অডিও বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তিনি আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। আবার বলছে, এটা একটু ভিডিও করে রাখেন, জায়গা মতো পাঠাতে হবে। অর্থাৎ তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠাতে হবে। গন্ডগোল কেন হলো না সেজন্য বিএনপি নেতাদের উপর বেজায় ছটেছেন তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এবং গন্ডগোল করার উদ্দেশ্যে ঢাকায় পরদিন শনিবার শহরের প্রবেশ মুখগুলোতে অবস্থান ধর্মঘট করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এই রাজপথ মানুষের, ঢাকা শহরের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয়ার অধিকার কোন রাজনৈতিক দলের নাই। সবাই সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারে, সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে পারে, এবং করছেও তারা। সেখানে বাঁধা দেয়া হচ্ছেনা, বরং সহযোগিতা করা হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, গত শুক্রবার তাদের সমাবেশের জন্য সমস্ত সহযোগিতা করা হয়েছে। তারা যেখানে চেয়েছে সেখানেই সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহরের প্রবেশ মুখ বন্ধ করে নগরবাসীকে নগর থেকে বের হওয়া আর নগরে ডুকা বন্ধ করে দেয়ার অধিকার কাউকে সরকার দিতে পারেনা, সে কারণে সেটি সরকার অনুমতি দেয় নাই।
তিনি বলেন, যারা এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দিয়ে জনগণের কষ্ট ঘটানের অপপ্রয়াস চালায় সেটি যাতে করতে না পারে জনগণের পাশে থাকা সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। কেউ যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতি বিনষ্ট করতে না পারে সেজন্য আমাদের দলের নেতাকর্মীরা ঢাকার প্রবেশ মুখে সতর্ক পাহারায় ছিল। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের উপর তারা আক্রমণ চালিয়েছে, পুলিশের উপর আক্রমণ চালিয়েছে। ২০১৩-১৪ ও ১৫ সালে যেভাবে আক্রমণ চালিয়েছে ঠিক একই ভাবে তারা ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ, জনগণ ও বাসের উপর আক্রমণ চালিয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি শনিবার প্রথমার্ধে সাতটি বাস জ্বালিয়েছে, রাতের বেলা আরো গাড়িতে আগুন দিয়েছে। প্রত্যেকটি গাড়ি ব্যক্তি মালিকানাধীন। অনেক কষ্টে গাড়ি গুলো কিনেছে মানুষ। এই গাড়ি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে একটি পরিবারকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, একটি পরিবারের স্বপ্নকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি কোন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হতে পারে না।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে তারা যে আগুন দিয়েছেন সেটি অস্বীকার করলেন। তার মত জঘন্য মিথ্যাবাদী বাংলাদেশের কখনো জন্মগ্রহণ করে নাই। মিথ্যা বলায় যদি কেউ চ্যাম্পিয়ন তাহলে তিনি হবেন। এরকম জঘন্য মিথ্যাচারী রাজনীতিবিদ কখনো বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে নাই। যারা গাড়িতে আগুন দিয়েছেন সেগুলো ভিডিও ফুটেজ আছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদেরকে গ্রেফতার ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খোঁচা দিলে জ্বলে উঠে উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা আঘাত করলে প্রতিঘাত করার জন্য একসাথে নেমে পড়ে। ওরা দেশের বেদিমূলে আঘাত হেনেছে, আবার জনগণের উপর হামলা পরিচালনা করছে। ওদেরকে কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় আমরা জানি। বিএনপির নেতারা ঘাপটি মেরে আছে, সেখান থেকে বের হয়ে এখন হামলা পরিচালনা করছে। সুতরাং এই হামলাকারীদের পাড়ায়-মহল্লায় গ্রামে-গঞ্জে প্রতিহত করতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি বিদেশীদের কাছে গিয়ে হাতে পায়ে ধরে, তারা আমাদের দেশটাকে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে চাই। আমাদের দেশের জমি সাগরের অংশ বেনিয়ারেদর হাতে তুলে দিতে চাই। একাত্তরেও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সমস্ত ষড়যন্ত্রের বিষ দাঁত ভেঙ্গে দিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে আমাদের পূর্বসূরী মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছে। এখন যারা আমাদের দেশকে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে চাই তাদের হাত থেকে দেশটাকে রক্ষা করতে হবে। আমরা জীবন দিয়ে হলেও দেশটাকে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে পারি না।
নেতাকর্মীদের সতর্ক দৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের বাকি মাত্র কয়েক মাস। আমরা আগামী নির্বাচনে বিজয় চিনিয়ে না আনা পর্যন্ত রাজপথে নেমেছি রাজপথেই থাকবো। আগুন সন্ত্রাসীদের আমরা এই দেশ থেকে বিতাড়িত করব। বিএনপি নির্বাচন চাই না, তারা চায় দেশে একটি গন্ডগোল পাকাতে। ওরা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ভন্ডুল করতে চাই, সেটি আমরা হতে দিতে পারি না। তাই নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানাবো ঐক্যবদ্ধভাবে পাড়ায় মহল্লায় গ্রামেগঞ্জে ওয়ার্ডে ইউনিটে বিএনপির আগুন সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবদের এই অপরাজনীতি বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুত পাবার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানাই।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামের সভাপতিত্ব ও যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি আবুল কাশেম চিশতি, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, উত্তরজেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম রাশেদুল ইসলাম, ছাত্র লীগের সাধারন সম্পাদক রেজাউল করিম, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা বাসন্তী প্রভা পালিত প্রমুখ।