মোঃ রিপন হাওলাদার
চা বিক্রেতা ছন্মবেশ ধারন করে চার ইয়াবা কারবারিসহ মূলহোতাকে ধরলো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা।
সংস্থাটির কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল টেকনাফ থেকে রাঙ্গামাটি হয়ে ইয়াবার বড় চালান আসবে ঢাকায়। সুযোগ বুঝে পাচার করা হবে দেশের উত্তরাঞ্চলে। এমন খবরে চা বিক্রেতার ছদ্মবেশ ধারণ করে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেপ্তার করা হয় সিন্ডিকেটের মূলহোতাসহ ৫ সক্রিয় সদস্যকে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীতে তিনটি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় ডিএনসি ঢাকা মেট্রো কার্যালয় (উত্তর)। এসময় তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ৪১ হজার ইয়াবা জব্দ করে অভিযানিক দলটি।
গ্রেপ্তারকৃত ইয়াবা কারবারিরা হলো, সিন্ডিকেটের মূলহোতা সাধন তঞ্চঙ্গ্যা (২৫), ফাতেমা (৩৫), মোছাম্মৎ মমিনা বেগম (২০), মোঃ ইয়াকুব আলী (৪০) ও মোঃ নাঈম (২৪)।
শুক্রবার (১৪জুলাই) তেজগাঁও ডিএনসি’র ঢাকা মেট্রো উত্তর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএনসির ঢাকা বিভাগীয় প্রধান ও অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ মজিবুর রহমান পাটওয়ারী। তিনি বলেন,এর পূর্বে উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের কয়েকটি মাদক/ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মাদকের চালান ঢাকায় আটক করা হয়। এতে এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা সতর্ক হয়ে যায়। মাদক লেনদেনের আগে সিন্ডিকেটের ৪-৫ জন সদস্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে। পরে সুযোগ বুঝে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মাদক হাতবদল করে। তারা সড়ক ও নৌপথ ব্যবহার করে টেকনাফ ও রাঙ্গামাটি থেকে বিভিন্নভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলে মাদক পাচার করে। এসব কারণে ডিএনসি আরো নজরদারি বৃদ্ধি করে।
মজিবুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আসে, গাবতলী এলাকায় একটি চক্র বিপুল পরিমাণ ইয়াবার একটি চালানের লেনদেন করবে। তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ডিএনসির ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সাধারণ চা বিক্রেতার ছদ্মবেশে সেখানে অবস্থান নেয়। বেলা ১১টার দিকে রাঙ্গামাটি হয়ে উত্তরবঙ্গের মাদক চোরাকারবারিদের অন্যতম সদস্য সাধন তঞ্চঙ্গ্যাকে নারীদের পেটিকোটের ভেতরে বিশেষভাবে তৈরি করা পকেটে ১১ হাজার পিস ইয়াবাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে সাধন জানান, টেকনাফ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে প্রথমে রাঙ্গামাটি নিয়ে যায়। পরে ওখান থেকে এনে গাবতলী এলাকায় অবস্থানরত উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের মাদক কারবারির কাছে সরবরাহ করে।
ডিএনসি’র ঢাকা বিভাগীয় প্রধান আরো বলেন, আমাদের কাছে আরো একটি গোয়েন্দা তথ্য আসে মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা ইয়বার চালান নিয়ে প্রথমে চাঁদপুর এসে অবস্থান করছে। পরে ওখান থেকে নৌপথে করে ঢাকার সদরঘাটে নিয়ে আসা হবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সদরঘাটে অপর অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই সদস্য ফাতেমা ও মোছাঃ মমিনা বেগমকে ৪ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত নারী সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তারা প্রথমে টেকনাফ থেকে ইয়াবা এনে চাঁদপুরে অবকস্থান নেন। পরে লঞ্চে ঢাকায় আসেন। ইয়াবা তাদের বহন করা লাগেজের গোপন পকেটে লুকানো থাকে। তারা এর আগে আরো চালান এভাবে নিয়ে এসেছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক তিন নম্বর অভিযানের বিষয়ে বলেন, মাদক বিক্রেতা ও একাধিক মামলার আসামি মোঃ ইয়াকুব আলী মিরপুরের কালশী এলাকায় ইয়াবা নিয়ে আসবেন বলে গোপন তথ্য আসে।
কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ইয়াকুব দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীর মিরপুর ও রংপুর অঞ্চলে ইয়াবা সরবরাহ করে আসছেন। সে প্রথমে টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে হোটেলে মজুদ করেন। পরে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এজন্যে তিনি প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। তার সহযোগীরা প্রাইভেটকারে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে। তারা সবুজ সংকেত দিলে তিনি মোটরসাইকেলে বহন করা ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময় ইয়াকুব আলী জানান, আগেও তিনি কক্সবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে পর্যটকের ছদ্মবেশে মোটরসাইকেলে একাধিক চালান নিয়ে এসেছেন।
একই দিন তেজগাঁও সার্কেলের অন্য একটি দল ফার্মগেট এলাকা থেকে অপর একজন মাদক ব্যবসায়ী নাঈমকে ১ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হয়েছে বলে জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।এময় আভিযানিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আর/এস