মোঃ রিপন হাওলাদার
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের সবচেয়ে বয়স্ক নারী ভোটার জহুরা খাতুন বয়সের ভারে অন্যের সাহায্যে চেয়ারে চড়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তিনি তার ভোট প্রয়োগ করেছেন।
৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সকাল বেলায় ধুলাসার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তিনি তাঁর ভোট প্রদান করেছেন বলে জানা যায়।
স্থানীয় সূত্র বলছে অত্র ইউনিয়নে তার সমবয়সী কোন পুরুষ বা নারী ভোটার হয়তো আর কেউ নেই ,আমাদের ধারণা এই ইউনিয়নে তিনিই একমাত্র শতবর্ষ উর্ধ্ব নারী ভোটার হতে পারেন।অপর এক সূত্র বলছে তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগী মুক্তি যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন।
তার স্বামী মৃত আব্দুল বারেক হাওলাদার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য সামগ্রী ও তথ্য আদান-প্রদানের দায়ে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ননা মিয়া’র নির্মম নির্যাতনে শয্যা শায়ী অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎযাপন করা হলেও আজ পর্যন্ত এসব অবহেলিত সহযোগী যোদ্ধারা তাদের স্বীকৃতি পাননি। তারপরও জীবনের পরন্তকালে জহুরা খাতুন তার পবিত্র আমানত (ভোট) অন্যের সাহায্য নিয়ে নিজেই স্বাধীনতার স্বপক্ষের প্রতিক নৌকায় প্রয়োগ করেছেন।
গত কয়েক বছর আগে তার এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,(বক্তব্যটি জহুরা খাতুন তার আঞ্চলিক ভাষায় বলেছেন -প্রতিবেদক বিষয়টি শুদ্ধ ভাষায় উপস্থাপন করেছেন)
আমরা-তো তখন এতো কিছু বুঝিনি যুদ্ধ কি জিনিস রেডিওতে শুনেছি শেখ সাহেব নামে একজন নাকি বলছে যুদ্ধ করতে হবে। তোমার দাদায় যুদ্ধ শুরুর কয়েক দিন পর বললো নতুন ধান দিয়ে কিছু চিড়া বানাও আমি নারকেল পারতাছি।
একজায়গায় যেতে হবে পরে চিড়া, নারকেল,এক জগ ডিপ কলের পানি নিয়ে জঙ্গলের দিকে গেলাম গিয়ে দেখি মৌডুবি এলাকার কিছু লোকজনকে খাবার গুলো দিয়ে আসলো।আমি প্রথমে ভাবলাম মনে হয় জঙ্গলে যাবে রান্নার কাঠ আনতে হয়তো সেগুলো এনে বাজারে বিক্রি করে আমাদের খাবার আনবে । তখন আমাদের খুব অভাব চলছিলো আটার রুটি মাঝে মধ্যে হয়তো একবেলা ভাত খাওয়ার সুযোগ হোতো।
শরীরের কাপড় চোপড়ও তেমন নিত্যনুতন জুটতো না।এমন বেশ কিছু দিন আমরা তাদের এমন শুকনো খাবার দিয়ে আসতাম আবার মাঝে মধ্যে আমার স্বামী তাদের চুল দাড়ি কেটে দিয়ে আসতো। এমন বেশকিছু দিন তাদের সাথে যোগাযোগের বিষয়টি তখনকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ননা মিয়া বুঝতে পেরে তাকে ডেকে নিয়ে যায়।
তাঁর কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি অস্বীকার করলে তখন তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।তাদের নির্যাতনে তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।যুদ্ধ শেষের অনেক বছর পর পর্যন্ত রোগাক্রান্ত অবস্থায় আর্থিক অনটনে চিকিৎসার অভাবে শেষ পর্যন্ত মারাযান।
কথা তার মেজো সন্তান মোঃ এমদাদুল হক(৫১)এর সাথে তিনি বলেন আমি কিশোর বয়সে সংসারে হাল ধরতে শহরে পাড়ি জমাই। শহরে গিয়ে (আওয়ামী লীগ)’র ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের চুন্নু ভাইয়ের সাথে সক্রিয় ছাত্র রাজনীতি করি।
৯৬ সালে শেখ হাসিনার জনসভার মাইকিং করার সময় ফ্রিডম পার্টির লোকজন ঢাকার শান্তিনগর মোড়ে আমাকে নির্মম নির্যাতন করে মাইক কেড়ে নেয় পথচারীরা আমাকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফয়েজ ভাইয়ের সহযোগীতায় পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডাইরী করা হয়।
এরপর আওয়ামী লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয় ভাবে অংশ করে আসছি। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনায় স্পিলিন্টার আঘাতে আহত হয়েছি ।বুকে স্পিলিন্ট নিয়ে বেঁচে আছি এতো ত্যাগ তিতীক্ষার পরেও দলের কোনো সুযোগ সুবিধা না পেয়ে আর্থিক অনটন জীবন জীবিকার তাড়নায় অন্য
ভাবে জীবন ধারণের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আর আমার গর্ভধারণী মমতাময়ী মা ও বাবা দেশ স্বাধীনে যেমন ভূমিকা রেখেছেন তেমনি জীবনের অন্তিম মুহূর্তে স্বাধীনতার প্রতিক নৌকার জয় সূ-নিশ্চিত করতে তার নাগরিক দায়িত্ব পালন করছেন।আমার মাতার বর্তমান বয়স শতবর্ষের বেশি হবে বলে আমরা ধারণা করছি। আমরাও তার সমবয়সী বা উর্ধ্ব বয়সী কোন নারী বা পুরুষের তথ্য পাইনি।