মোজাহের ইসলাম নাঈম নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি
গৃহবধূর মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসেন আত্মীয়স্বজনেরা। এসে দেখেন ঘরে কেউ নেই। ঘরের মেঝেতে লাশ একটি কাপড় দিয়ে ঢাকা। লাশের পাশে ইঁদুর মারার বিষের একটি প্যাকেট ফেলে রাখা হয়েছে। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় চর জুবলী ইউনিয়নের চর কচ্ছপিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে লাশ উদ্ধার করেছে চর জব্বর থানা-পুলিশ। তাঁর নাম আজমলা আক্তার (২৭)। গতকাল রোববার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
আজমলা আক্তার দুই সন্তানের জননী ছিলেন। আজ সোমবার সকালে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আজমলার স্বামী সাদ্দাম হোসেন ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক।
নিহত আজমলার স্বজনদের দাবি, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী সাদ্দাম আজমলাকে তাঁর দুই সন্তানের সামনে বেধড়ক মারধর করেন। এতে তাঁর মৃত্যু হয়। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে নিতে নিহত আজমলার লাশের পাশে ইঁদুর মারার ওষুধ রেখে আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যমতে, প্রায় ১০ বছর আগে সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আজমলার বিয়ে হয়। তাঁর মা-বাবা দুজনই মারা গেছেন। বিয়ের পর তাঁদের সংসারে দুটি সন্তানের জন্ম হয়। যাদের একজনের বয়স ১০ বছর। আর ছোটজনের বয়স ৬ বছর। গতকাল বিকেলে পারিবারিক কলহের জের ধরে সাদ্দাম আজমলাকে পেটান। একপর্যায়ে আজমলার অবস্থা খারাপ দেখে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান হাসপাতালে নেওয়ার আগেই আজমলা মারা গেছেন। হাসপাতাল মৃত ঘোষণার পর আজমলাকে বাড়িতে নিয়ে যান সাদ্দাম হোসেন। পরে তিনি আজমলার এক আত্মীয়কে ফোন করে তাঁর অসুস্থতার কথা জানান।
আজমলার মামা আবুল বাশার বলেন, তাঁর ভাগনিকে পিটিয়ে হত্যার পর স্বামী সাদ্দাম হোসেন আত্মহত্যা সাজানোর জন্য লাশের পাশে ইঁদুর মারা বিষের প্যাকেট রেখে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় আজমলার দুই সন্তানকেও নিয়ে যান। আজ সোমবার সন্তানদের উদ্ধার করার পর তারাই পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছে। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত সাদ্দাম ও তাঁর পরিবারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
চর জব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন মিয়া বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় লাশের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ইঁদুরের বিষও পেয়েছেন তাঁরা। এ ঘটনায় নিহত নারীর পরিবারের কাছ থেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা নেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর থেকে স্বামী পলাতক।