
নারায়ণগঞ্জে পিকআপের চাপায় স্বামী-স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু, পরিকল্পিত হত্যা? নাকি দুর্ঘটনা?
মাসুম বিল্লাহ:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মারীপাড়া এলাকায় পিকআপ ভ্যানের চাপায় রহস্যজনকভাবে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের মিরেরবাগ গ্রামের বাবুল মিয়া ও তার স্ত্রী পিয়াঙ্কা।
নিহত বাবুল মিয়ার বোন মেহেরুন নেছা দাবি করেন, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে জামপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশ মিয়া দীর্ঘদিন ধরে তাদের হয়রানি করছিলেন। বাবুল মিয়াকে একটি এনজিও থেকে ঋণ তুলে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার পৈত্রিক সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে লিখে নেওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে আদালতে মামলা চলছিল।
জানা যায়, সোমবার সকালে বাবুল মিয়া পুকুর থেকে মাছ ধরতে গেলে তালতলা ফাঁড়ির পুলিশ পলাশ মিয়ার ইশারায় তাকে ধাওয়া করে। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি সারা দিন আত্মগোপনে থাকেন এবং জমি সংক্রান্ত বিরোধ এড়াতে বাসা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।
সোমবার রাত ১০টার দিকে স্ত্রীকে নিয়ে মালপত্রসহ নতুন বাসায় যাওয়ার পথে অজ্ঞাত একটি পিকআপ ভ্যান তাদের বহনকারী ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবুল মিয়া ও তার স্ত্রী মারা যান।
নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, বাবুল মিয়া ও তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর পলাশ মিয়া একাই ধর্মীয় রীতিনীতিসহ সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং পরিবারের সদস্যদের এতে অংশ নিতে দিচ্ছেন না। এতে তার ভূমিকা আরও সন্দেহজনক হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে তালতলা বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফেরদৌস ইসলাম জানান, এটি সড়ক দুর্ঘটনা বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে পুলিশ নিহতদের বাড়িতে গিয়েছিল কি না, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
নিহত বাবুল মিয়ার ভাতিজা হানিফ মিয়া বলেন, “সকালে পুলিশ হয়রানি করেছে, আর রাতে পিকআপ দুর্ঘটনায় চাচা-চাচি মারা গেলেন—এটি নিছক দুর্ঘটনা হতে পারে না। এর আসল রহস্য উদঘাটন করা দরকার।”
জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. মোতালেব ভূঁইয়া জানান, স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যুর খবর তিনি শুনেছেন। তবে তাদের সঙ্গে পলাশ মিয়ার জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন।
ঘটনার পর থেকে পলাশ মিয়ার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে, এবং তার সঙ্গে যোগাযোগের কোনো উপায় পাওয়া যাচ্ছে না।
নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে করছেন। তারা দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।