সাইদুল রহমান সাকিব– চট্টগ্রামে প্রতারণা মামলায় আসামিকে এজাহার থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ পতেঙ্গা মডেল থানার এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে।
এস আই কিশোর বড়ুয়ার বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে মামলা থেকে বাদ দেওয়া কথা বলে এজাহারে অজ্ঞাত আসামিকে জড়িত করার অভিযোগএনে ফাঁসানোর অভিযোগ সিএনজি চালক পারভেজের পিতা কামরুল ইসলামের।
জানা যায়,দুবাই প্রবাসী মুনতাসির আহমেদ দীর্ঘদিন দুবাইয়ে বিভিন্ন ব্যবসা করে আসছে। প্রবাসে থাকাকালীন ফোরকান নামেএকজনের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৮ই সেপ্টেম্বর ফোরকান দেশে আসার কথা জানালে প্রবাসী মুনতাসিরতার স্বজনের প্রয়োজনে বেশ কিছু স্বর্ণালংকার, মোবাইল, ল্যাপটপ,ও শুল্ককর বাবদ ৩৭৫ ইউএস ডলার সহ সর্বমোট ১৯ লক্ষ টাকারমালমাল তার পরিবারের সদস্যের জন্য পাঠায় ফোরকানের মাধ্যমে।
পরবর্তীতে ফোরকান সকল মালামাল দেশে এসে মুনতাসিরের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলে ৯ সেপ্টেম্বর মালামালসহফোরকান চট্টগ্রামগামী আল জাজিরা বিমানের মাধ্যমে চট্টগ্রামে আসেন। কিন্তু দেশে ফেরার পর ফোরকান মুনতাসিরের কোন মালামালতার পরিবারের সদস্যদের নিকট বুঝিয়ে না দিয়ে এয়ারপোর্ট ত্যাগ করেন। ইতোমধ্যে বিমানবন্দরে মুনতাসিরের পরিবারের সদস্য এসেফোরকানকে অনেক খোঁজাখুজি করেও দেখা না পেয়ে তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়।
সূত্রে জানা যায়, ফোরকান তার কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে আগে থেকে পরিকল্পনা করে মালমালগুলো নিয়ে কৌশলে এয়ারপোর্ট থেকেপালিয়ে যায় এবং ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার মালামাল বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে প্রতারণা মূলকভাবে আত্মসাৎ করেন।
এই ঘটনার পর ফোরকানের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে কোন খোঁজ না পেয়ে দেশে ফিরে আসেন প্রবাসী মুনতাসির। দেশে ফিরেমুনতাসির ফোরকানের গ্রামের বাড়ি আনোয়ারায় সন্ধান নিয়ে তার বাড়ি গিয়ে তারা পরিবারের সদস্যদের কাছে বিষয়টি অবগত করলেতারা ভুক্তভোগী মুনতাসিরের সাথে অসহযোগিতা মূলক আচরণ করেন। এরপর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে ঘটনাস্থল পতেঙ্গা থানায়এসে মুনতাসির একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
ঘটনার পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর পতেঙ্গা মডেল থানায়
প্রবাসী ভুক্তভোগী মুনতাসির বাদী হয়ে মো. ফোরকান,নূর হোসেন, আহম্মেদ কবির সহ অজ্ঞাত ২ / ৩ জনের নামে মামলা করেন। এরপর পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহয়তায় ফোরকানসহ বাকি তিন জনকে আটক করে । আটককৃত চারজনের মধ্যে মূল অভিযুক্তফোরকান,নূর হোসেন, অজ্ঞাতনামার মধ্যে পারভেজ ও সরোয়ারকে আটক করা হয়।
কিন্তু এই ঘটনায় অন্যরা জড়িত থাকলেও সিএনজি চালাক পারভেজ ঘটনার কিছুই জানত না বলে দাবি অভিযুক্ত আসামি সিএনজিচালক পারভেজ এর বাবা কামরুলের। পারভেজ প্রতিদিনের মত সিএনজি নিয়ে ভাড়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল। কাটগড় থেকেএয়ারপোর্টে একটা যাত্রী আনার কথা বলে তাকে ভাড়া করে নেওয়া হয় বলে দাবি তার বাবার।
এঘটনার পর পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। কিন্তু আটকের পর পারভেজের বাবা এসকল বিষয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ‘এসআইকিশোর বড়ুয়াকে‘ জানালে তিন বলেন তার ছেলেকে মামলার এজাহার থেকে বাদ দিবে বলে কিছু টাকা নিয়ে থানায় হাজির হতে বলেন, পরবর্তীতে তারা বাবাসহ কয়েকজন পতেঙ্গা থানার দ্বিতীয় তলায় এক মেম্বারসহ দর কষাকষির মাধ্যমে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এসআই কিশোরকে দেওয়া হয়। তবে তিনি এই টাকার বিষয়ে কোনো রেকর্ড কিংবা ভিডিও করতে না পারার জন্যে তার বাবা ও সাথে থাকালোকের মোবাইল এসআইয়ের হেফাজতে নিয়ে নেয়। এবং এই টাকা গ্রহণের কোন ডকুমেন্টস দেয় নি, কেন নেওয়া হয়েছে তার কোনডকুমেন্টও করেনি।এমন অভিযোগ চালক পারভেজের বাবার।
তিনি বলেন, মামলা থেকে বাদ দেওয়া তো দূর, আমার ছেলেকে আরো ৭ দিনের রিমান্ড সহ মামলার তদন্তকার্য সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্তআসামিকে জেল হাজতে রাখার কথা উল্লেখ করেছেন এজাহারে। তাহলে আমরা গরিব মানুষ। আমাদের থেকে এতগুলো টাকা কি কারণে? কেন নিল? এটা জবাব চাই। আমার ছেলে দোষী হলে দেশের আইন অনুযায়ী শাস্তি হবে নিরপরাধ হলে মুক্তি পাবে কিন্তুএসআইয়ের এই কাজ ও কি প্রতরণা নয়!! আমার ছেলেটা সিএনজি চালিয়ে সংসার চালায় সে আজ দীর্ঘদিন হাজত বাস করছে। এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এটাই আমার দাবি।
অভিযুক্ত এসআই কিশোর বড়ুয়া বর্তমানে পতেঙ্গা মডেল থানায় কর্মরত আছেন।
এজাহার থেকে আসামির নাম বাদ দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কিশোর বড়ুয়ার সাথে কথা বলতে চাইলেতিনি বিষয়েটি শুনার পর প্রথম বার নেটওয়ার্ক জটিলতা বলে পরে অন্য নম্বর থেকে ফোন করলে ডিউটির ব্যস্ততার অজুহাত জানিয়ে থানায় আসতে বলেন।
এরপর প্রতিবেদকের ফোনকলের পর এস আই কিশোর বড়ুয়া পারভেজের বন্ধুর দোকানে গিয়ে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানানো নিয়েক্ষোভ প্রকাশ করে পারভেজের বাবাকে অস্ত্র নিয়ে মাঠে খেলার হুমকি দিয়ে বলেন, বেশি উড়াউড়ি করলে ডানা ভেঙ্গে পড়বে, সাবধানকরে বলেন কিশোরের হাতে অস্ত্র আছে। পারভেজের বাবার হাতেও অস্ত্র দিবো।দেখবো কে কাকে মারতে পারে।
এবিষয়ে বিষয়য়ে পতেঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আফতাব হোসেনকে মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিয়েও পাওয়াযায়নি।
থানায় টাকা লেনদেন করার সময় উপস্থিত থাকা সেই ইউপি মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি টাকা লেনদেনের বিষয়টি স্বীকারকরে বলেন, নাম বাদ দিতে নয়, টাকাগুলো যে সকল মালামাল উদ্ধার হয়নি সেসব মালামালের ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হয়েছে।চারজন মিলে ৫৫ হাজার করে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। একটি বার উদ্বার হয় নি হলে মামলা বাদি তুলে নিবে।আমারমিথ্যা বলার কোন প্রয়োজন আছে? তারা কি আমাকে বেহেস্তে নিবে! টাকা দেওয়ার সময় আমি থানায় উপস্থিত ছিলাম তবে সেটাকসমেটিক আর বালা (স্বর্ণ) একটা বাবদ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) বন্দর শাকিলা সুলতানার সাথে মুঠোফোনজানান, ‘এই ঘটনায় আমার দপ্তরে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। যদি এধরণের অভিযোগ আসে আমরা আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।‘