
দেলোয়ার হোসেন
জঙ্গি সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে( গত ২৩ আগস্ট ২০২২ )তারিখে কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে ০৮ জন তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। উক্ত নিখোঁজের ঘটনায় নিখোঁজ তরুণদের পরিবার কুমিল্লার কোতয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গণমাধ্যমসমূহে বহুলভাবে আলোচিত নিখোঁজের এই ঘটনা দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এর প্রেক্ষিতে র্যাব ফোর্সেস নিখোঁজদের উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে র্যাব “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” নামক একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায় এবং র্যাব জানতে পারে যে, এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।
পরবর্তীতে অক্টোবর ২০২২ থেকে অদ্যাবধি দেশের বিভিন্ন স্থানে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ইতোমধ্যে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৭৫ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমান দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও উগ্রবাদী বই। এছাড়াও উদ্ধার করা হয় সংগঠন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও কন্টেন্ট। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃতদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় এই সংগঠনের আমীর গ্রেফতারকৃত আনিসুর রহমান @মাহমুদ। ইতোপূর্বে র্যাব কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমের প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুন, সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও উপ প্রধান মানিক, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিব, অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মুনতাছির, দাওয়াতী ও অন্যতম অর্থসরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ, বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার ও পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেন @চম্পাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, সংগঠনের আমীর আনিসুর রহমান @মাহমুদ এর সাথে কেএনএফ এর প্রধান নাথাম বমের সুসম্পর্ক থাকায় কেএনএফ এর সাথে তাদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হয় এবং কেএনএফ ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র জঙ্গিদের পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র ও রশদ সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করতো। পরবর্তীতে র্যাবের অব্যাহত অভিযানের ফলে পাহাড়কে নিরাপদ না মনে করায় আমীরের নির্দেশে জঙ্গিরা পাহাড় হতে পলায়ন করে সমতলের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে যায় এবং পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের আমীর মোঃ আনিসুর রহমান @মাহমুদ সংগঠনের কয়েকজন সদস্যসহ মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকায় একটি বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে অদ্য রাত ০৩:০০ ঘটিকায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংগঠনটির আমীর ১। মোঃ আনিসুর রহমান @মাহমুদ (৩২), পিতাঃ মোখলেছুর রহমান, বান্দরবান ও তার দুই সহযোগী ২। কাজী সরাজ উদ্দিন @সিরাজ (৩৪), পিতাঃ কাজী নূর উদ্দিন, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ও ৩। মাহফুজুর রহমান বিজয় @বাবুল @জাম্বুলি (২৮), পিতাঃ আব্দুল হাফিজ, জগন্নাথপুর, সিলেটদের’কে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রবাদি পুস্তিকা ও নগদ অর্থ। উদ্ধার করা হয় চাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়ায় ৷