এ.বি.এম.হাবিব-
নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের কশবা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ এমদাদুল হক (আব্বাস)। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্রয়কৃত সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসলেও সে সম্পত্তিতে গৃহনির্মাণ কাজ শুরু করতে গেলে তাতে বাঁধা দেন একই গ্রামের মৃত আশরাফ আলী প্রাং এর পুত্র আজাদ আলী(৫০)।
দিনমজুর এমদাদুল হক নিরুপায় হয়ে গ্রাম্য আদালতে বিচার প্রার্থনা করেন। তবে ওই বিচারকার্য রায় পর্যন্ত না পৌঁছালেও প্রতিপক্ষের দেওয়া নানা হুমকির কারনে গৃহনির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেননি এমদাদুল। এর কিছু দিন পর ভুক্তভোগী পরিবার জানতে পারেন যে, তাদের বিরুদ্ধে উক্ত সম্পত্তির বৈধতার প্রশ্নে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছে আজাদ আলী। বিজ্ঞ আদালত দায়েরকৃত ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য ২৪/০৭/২০২৩ তারিখে মহাদেবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনারকে(ভূমি) দ্বায়িত্ব দেন। সবশেষে ওই তদন্তের দ্বায়িত্বভার পড়ে চেরাগপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) এর উপর।
গত ০৯/১১/২০২৩ তারিখে মোঃ রুবেল হোসেন (ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা) সাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, উপযুক্ত বিষয় ও সূত্রের আলোকে জানানো যাচ্ছে যে, উক্ত মামলার সহিত দাখিলী কাগজপত্র, অত্রাফিসের রেকর্ড-রেজিষ্টারপত্রাদি পর্যালোচনা এবং উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার সহযোগে গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সরেজমিন তদন্ত করা হয়। সরেজমিন তদন্তকালে দেখা ও জানা যায় যে, নালিশী স্বরূপপুর মৌজার আরএস ৬৪০নং খতিয়ানের ২২৪২ নং দাগের ০.১০ একর সম্পত্তি মোঃ এমদাদুল হক ক্রয়সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে ভোগ দখল করে আসছেন। নালিশী সম্পত্তি উক্ত মামলার বাদী/দরখাস্তকারী মোঃ আজাদ আলী কোনদিনই ভোগ দখলে ছিলেন না এবং বর্তমানেও নেই।
উক্ত মামলার বাদী নালিশী দাগের সম্পত্তির পরিবর্তে ওই একই মৌজার অন্য দাগে দখল ভোগ করেন। উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই অন্তে একমত পোষনপূর্বক পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৯/১১/২০২৩ তারিখে সেটি দাখিল করেন মহাদেবপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত আরা। দাখিলকৃত প্রতিবেদন অসংগতিপূর্ন ছিল এমন অভিযোগ এনে পুনরায় আপিল করেন আজাদ আলী।
জীর্নশীর্ন শরীরের এমদাদুল হকের অশ্রু ঝরা জল আর সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভরসা এবং আইনের প্রতি অসীম শ্রদ্ধাই যেন শেষ সম্বল। তবে ওই পরিবারের সকলের দিন কাটছে ভয় আর নানান আতঙ্কে এমনই অভিযোগ এনে ভুক্তভোগী এমদাদুল হক প্রতিবেদককে বলেন, প্রায় ১৪ বছর ধরে উক্ত জমির ভোগ দখলে আছি, পৈতৃক সূত্রে কোন সম্পত্তি না পাওয়ায় বাড়ি তৈরির জন্য সে খুব কষ্টের টাকা জোগাড় করে ওই জমিটুকু কিনেছলেন। কিন্তু তাকে বাড়ি তৈরির কাজে একাধিক বার বাঁধা দেওয়া হয়েছে। কে বা কারা বাঁধা দিয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে এমদাদুল হক আরো বলেন, প্রথমত আজাদ আলী বাধা দিলেও পরবর্তীতে তার আরো তিন ভাই আনোয়ার হোসেন, হায়দার আলী এবং হাফিজুর রহমান সংঘবদ্ধভাবে তার কাজে বাঁধা প্রদান করে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরির প্রভাব দেখিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি এবং মারপিটের হুমকি দিয়ে আসছে আনোয়ার হোসেন। ঘটনার সত্যতা উদঘাটনের তাগিদে তারা উক্ত জমি দাতা মোঃ ইউনূস আলীর সাথে কথা বলেছে, এ ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, সম্পত্তিটি তাদের পৈতৃক, ২০/৬২/৭২ পরপর তিনটি খতিয়ানের মালিক তারা। গত ১২/১৩ বছর আগে আমরা ১০ শতক জমি এমদাদুলের নিকট বিক্রি তারা করেছেন সঠিক বলে জানান। জোরপূর্বক ভাবেই ওই জমি দখল চেষ্টা করছে আজাদেরা।
এব্যাপারে স্থানীয় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি জানান, ক্রয়সূত্রে ওই সম্পত্তির মালিক এমদাদুল হক। মূলত বাড়ি নির্মানের জন্য জায়গাটুকু ক্রয় করেছেন তিনি। বাড়ি তৈরির কাজে যারা বাঁধা দিয়েছে তারা কখনোই ওই সম্পত্তির দখলে ছিলেন না। এছাড়া গ্রামের সকলকেই প্রায় জিম্মি করে রেখেছে আনোয়ার হোসেন।প্রধানমন্ত্রী’র নাম ভাঙিয়ে এবং ভয় দেখিয়ে গ্রামে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে তা থেকে অতি দ্রুত পরিত্রাণের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
এব্যাপারে অভিযুক্তদের মধ্যে মোঃ আজাদ আলীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিবাদমান সম্পত্তি আমাদের পৈতৃক, আদালতে মামলা চলমান আছে, তবে ঘর নির্মান কাজে বাঁধা প্রদানের বিষয়টি অস্বীকার করে সে।
পরবর্তীতে মুঠোফোনের মাধ্যমে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনের সাথে কথা হলে সে জানায়, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কমিশনার যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তা আমাদের কাছে অসংগতিপূর্ন মনে হওয়ায় আমরা পুনরায় আপিল করেছি। বর্তমানে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এমদাদুল হক ওই দাগে জমির মালিক ১.০৪ শতক, বাকি অংশ আমাদের পৈতৃক। বাড়ি তৈরির কাজে বাঁধা প্রদানের বিষয়টি তিনিও অস্বীকার করেন।