এ.বি.এম.হাবিব-
নওগাঁয় চেকের ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছেন বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা ও ছেলে।
ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের ভীমপুর গ্রামে।
জানা যায়, উপজেলার আব্দুল জব্বার সরদার তার দুই ছেলে জলিল ও ইমাজ ২০১৭ সালে সৌদি আরবে কাজ নিয়ে পাঠানোর সময়, দালালদের চক্রে পড়ে তাদের দাবীর সকল টাকা জমিজমা বিক্রয় করে পরিশোধ করেও ফ্লাইট হওয়ার আগে দুই লক্ষ টাকা আবারও দাবী করে বসে। আরো দুই লক্ষ টাকা না দিলে ফ্লাইট দেবে না বা সৌদী আরবে যেতে পারবে না বলে দালাল চক্র জানায়। এই দুই লক্ষ টাকা এতো অল্প সময়ে কোথায়ও জোগাড় করতে না পেরে আপন ভাইয়ের ছেলে ভাতিজা নওগাঁ শহরের ইঁদুরবটতলী মৃত লোকমান সরদারের ছেলে ব্যবসায়ী রুস্তমের কাছে যায়। সে সুযোগে রুস্তম সুদের উপর টাকা দিতে রাজি হয়, লাখে প্রতিমাসে ১০হাজার অথ্যাৎ দুই লাখে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা দাবী করে বসে। উপায় অন্ত না পেয়ে,জব্বার সরদার ও তার বড়ছেলে জলিল তাতেই রাজি হয়ে যায়। এই টাকা দেওয়ার সময় সুদারু রুস্তম আগেই ২০হাজার টাকা কেটে নিয়ে ১লক্ষ ৮০হাজার টাকা দেয় এবং জব্বার ও তার ছেলে জলিলের কাছ থেকে ২টি করে মোট ৪টি নিয় নেয় সুদারু রুস্তম। ৫মাস ধরে প্রতিমাসে ২০হাজার টাকা করে সুদ দিয়ে, ৬মাসের বেলায়, সৌদিতে আশে পাশের বন্ধু ও পরিচিত জনদের কাছ থেকে ২লক্ষ টাকা হাওলাত নিয়ে একবার পরিশোধ করে দেয় রুস্তমের টাকা। রুস্তম ও তার স্ত্রী আকলিমা জলিলের বাবা জব্বারের মাধ্যমে ২লক্ষ টাকা বুঝিয়ে পেয়ে, পরবর্তীতে জব্বারের বাড়ীতে গিয়ে চেক ফেরত দেবে বলে জানায়। আপন ভাতিজা তাই সেও বিশ্বাস করে বাড়ী চলে যায়। পরবর্তীতে চেক গুলো ফেরত চাইলে, আজ দেবো,কাল দেবো বলে তালবাহানা শুরু করে সুদারু রুস্তম। হঠাৎ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে ১২লক্ষ ৫০হাজার টাকা উল্লেখ্য করে একটি লিগ্যাল নোটিশ পেয়ে মাথা ঘুরে যায় আব্দুল জব্বার সরদারের। পরবর্তীতে জানতে পারে, তার ভাতিজা সুদারু রুস্তমের সহচর, দীলিপ নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে চেকের মামলা করেছে। যার নং-১৩৯১/১৮(নওগাঁ)। যে দীলিপকে জব্বার সরদার কোন দিন দেখেন নাই। পরবর্তীতে ২০১৯ আগস্ট মাসে সুদারু রুস্তমের আরেক সহচর পার-নওগাঁ মধ্যপাড়া মৃত মজিবরের ছেলে শহিদুলকে দিয়ে নয় লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার একটি মামলা করে। যার নং-১১৫৯/১৯ (নওগাঁ)। এরপর সুদারু রুস্তম নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের ফেটগ্রামের তার নিজের মেয়ে জামাই মাহবুবুলকে দিয়ে জলিলকে বিবাদী করে আট লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার চেকের মামলা করে। যার নং-৬৭৮/২১(নওগাঁ)।
বৃদ্ধ অসুস্থ অসহায় জব্বার জানায়,তার ছেলে জলিল সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় ভাতিজা রুস্তমের সহচর দীলিপের করা মিথ্যা মামলায় ১বছর জেলও খেটেছেন তিনি। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন,বড় আশা নিয়ে ছেলেদের বিদেশ পাঠিয়েছেন কিন্তু তার এই ভাতিজার চালাকিতে তাদের সংসারটি তছনছ হয়ে গেছে। তার বিক্রয় করার মত আর কেন কিছুই নেই। মামলায়, মামলায় সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। জেল খেটে শরীরে অনেক অসুখে বাসা বেঁধেছে, প্রতিদিন সে ও তার স্ত্রীর ঔষধ খেতে হয় ২৭৫ টাকার। ছেলেরা বর্তমানে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে। তিনি এ বিপদ থেকে উদ্ধার হতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়,সুদারু রুস্তম শহরের ইঁদুর বটতলী এলাকার কুখ্যাত সুদারু। তার অনেক সহচর আছে। এভাবে একাধিক লোকজনদের টোপ দিয়ে সুদের উপর টাকা দিয়ে, পরিশোধ করার পরও চেক গুলো ফেরত না দিয়ে, তার বিভিন্ন সহচরীদের দিয়ে নওগাঁ কোর্টে মামলা করে বাড়তি টাকা নেওয়ার ধান্দা করে আসছে। এই নওগাঁ কোর্টে সে নিজেও একাধিক চেকে মামলা করেছে।
দীলিপ নামের বাদীর সাথে কথা হলে সে জানায়,রুস্তম তাকে বাদী বানিয়ে খরচপত্র সবকিছুই দিচ্ছে তাই তিনি ওই মামলাটি চালিয়েছে, এবং জব্বারকে জেলও খাটিয়েছে ১বছর। কিন্তু কোন ভাবেই তার কাছে টাকা নেওয়া যায় নাই। জব্বার নামের লোকটিকে মামলার আগে কখনো দেখেনি বলেও জানায়। আর একসাথে সাড়ে ১২লক্ষ টাকা কাউকে দেওয়ার মত সামর্থও কখন তার নেই বলে জানায়।
মজিবরের ছেলে শহিদুলের কাছে জানতে চাইলে সেও একই কথা জানায়।
সুদারু রুস্তমের আপন জামাই মান্দার পরানপুর ইউনিয়নে ফেটগ্রামে গিয়ে মাহবুবুল আলমের (হাইস্কুলের পিয়ন) কাছে জানতে চাইলে সে জানায়,তার শশুড় রুস্তম তাকে চেকটি দিয়ে মামলা করিয়েছে। মামলাটি শেষের পথে আছে বলে আর কিছু বলতে পারবেনা বলে জানায়।
সব শেষে নওগাঁ শহরের ইঁদুর বটতলীতে সুদারু রুস্তমের বাড়ীতে গিয়ে জানতে চাইলে, তার ছোট ভাই মোস্তাক ও তার বড় ছেলে সহ উপস্থিত থেকে সকলের সামনেই সে জানায়, ২০১৭ সালে ২লক্ষ টাকা সুদের উপর নিয়ে ছিলো ঠিকই কিন্তু সেই টাকা ফেরত দেয় নাই তাই সে চেকও ফেরত দেয় নাই। তাই সে তার ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন জনকে দিয়ে মামলা গুলো করেছে। এই মামলা গুলো করতে, দৌড়াদৌড়ি করতে তার অনেক খরচ হয়েছে। সবকিছু মিলে বর্তমানে ৮লক্ষটাকা দিলে, সকলকে দিয়ে মামলা গুলো প্রত্যাহার করে নেবেন বলে জানান।
নওগাঁর সচেতন মহল মনে করেন,এগুলো সুদারু সমাজের কিট। এই সুদারু রুস্তম সুদের ব্যবসা দীর্ঘদিন থেকে চালু রেখেছে। শুধু তাকে কোর্টে তলব করে জিজ্ঞাসা করলেই, সবকিছু দিনের আলোর মত পরিস্কার হয়ে যাবে। এমন জলিল জব্বারের মত অনেকে, এসব সুদারুদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। প্রশাসনকে শক্তহাতে তদন্ত করে এসব কিটদের আইনের আওতায় আনলে,সমাজ সঠিক ভাবে পরিচালিত হবে বলে তারা মনে করেন।