মোঃ রিপন হাওলাদার
দেওয়ান বাগ দরবার শরীফের মোর্শেদ ও তার স্ত্রীর মাজার জিয়ারতে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন এক ভক্ত ও তাঁর সহধর্মিণী।
বুধবার ৮ মে সকালে কমলাপুর বাবে মদিনায় দেওয়ান বাগ হুজুরের সহধর্মিণীর ৬৭ তম জন্মদিন উপলক্ষে শরিয়তুল্লাহ বিপ্লব ও তাঁর স্ত্রী মাহমুদাসহ বেশ কিছু ভক্তবৃন্দরা মাজার জিয়ারত করতে গেলে সেখানে দেওয়ানবাগ শরীফের কর্তৃপক্ষের বাঁধার শিকার হয়েছেন বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন।
এ সময় ক্ষুব্ধ শরিয়তুল্লাহ বিপ্লব বলেন,আমি দেওয়ানবাগের বড় পীরের একজন ভক্ত হিসেবে কাজ করি এবং ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে ১৯৯২ সাল থেকে ওনার সঙ্গে ছিলাম। বিভিন্ন কাজে বড় পীর এবং তাঁর স্ত্রীসহ তাদের পরিবারকে সূ-পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি । তার সাত সন্তান প্রথমে তিনজন কন্যা এবং পরে চারজন ছেলে। পীরে ও তাঁর স্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নয় তারা সন্তানের মত করে স্নেহ করতো। সে হিসাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমাকে সম্পৃক্ত রাখত পীর এবং তার স্ত্রী। আমার জন্মদাত্রী মাতা থাকলেও আমি পীরের স্ত্রীকে মা হিসেবে ডাকতাম। তিনি আমাকে সেভাবেই ভাবতেন।
তিনি আরো বলেন,পীরের আস্তানা দেওয়ানবাগ শরীফের পাশেই উটের খামার করা হয়, যার মালিক মোঃ আব্দুর গফুর, দাগ নং ৮৪১, ৮৪৩ খতিয়ান নং ৬৪। আব্দুল গফুরের দেওয়া পাওয়ার মূলে এই জায়গার দাবীদার এখন আমি শরীয়তুল্লাহ বিপ্লব কিন্তু ওই জায়গা নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে প্রশ্ন না ওঠে সে বিষয়ে আমার মোর্শেদ দেওয়ানবাগীকে পরামর্শ দিলে, তিনি তার ছেলে মেয়েদের জানায়, তার পর থেকে ওনার ছেলেরা আমার প্রতি ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়। এরপরে ২০০৯ সালে পীরের স্ত্রী মারা যান।
উনি আমাকে সন্তানের মত অধিক স্নেহ করতেন এবং বিভিন্ন সময় টাকা পয়সা দিতেন। আমি আমার সাধ্যমত তার সন্তানদের জন্য লেখাপড়াসহ বিভিন্ন কাজে খরচ করতাম। এখন পর্যন্ত তাদের পেছনে খরচ করার তিন কোটি টাকার অধিক পাওনা। যদিও আমি ওই পরিবারের সন্তান ও তাদের জন্যে বিভিন্নভাবে টাকা খরচ করেছি। এসব খরচের বিভিন্ন ভাউচার, নথি এবং তথ্য আমার কাছে রয়েছে। এসব পাওনা টাকাগুলো না দিতে, দরবারের নজরানার চাঁদা এবং মাজারে পাশে দখল করা আব্দুল গফুরের জমিতে উটের খামার নিয়ে কথা বলার কারনে আমাকে সেখানে যেতে নিষেধ করা হয়েছে একপর্যায়ে আমি গেলে আমাকে মারধর করেছে।( নজরানার চাঁদা বলতে মাজারে আসা ভক্ত কুলের দান করা অর্থ ও টাকাকে বুঝায় ) সেখান থেকে প্রাণে বেঁচে আসলেও তারপর থেকে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে, তখন দরবারে যাওয়ার সময় আমার স্ত্রীকেও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে আমাকে মাজারে ঢুকতে দেয়া হয় না। এরপরও আমি মাঝেমধ্যে লুকিয়ে দরবারে গিয়ে মাজার জিয়ারত করেছি। এরমধ্যে ২০২৩ সালের শেষে র দিকে আদালতের দ্বারস্থ হই। এরপর আদালতে নির্দেশনায় ২০২৪ সালের সেখানে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি কয়েকবার। কিন্তু তারপরেও আমার স্ত্রী ও আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে আমি ভয়ে পালিয়ে এবং লুকিয়ে লুকিয়ে থাকি।এর মধ্যে বিষয়টি লিখিতভাবে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি),ডিএমপি কমিশনারকে অবগত করেছি। হত্যাসহ বিভিন্ন ভাবে দেওয়া হুমকির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি।
অশ্রুসিক্ত নয়নে শরিয়তুল্লাহ বিপ্লব বলেন,আমি দেওয়ানবাগী মোর্শেদের ভক্ত ছিলাম বলে,তাকে হঠাৎ করে ভুলতে পারি না,তাই মাজার জিয়ারত করার জন্যে ঢোকতে গেলে বাঁধা দেয়।পীরের স্ত্রীর জন্মদিনে উনার মাজার জিয়ারতের জন্য আমি বহুবার চেষ্টা করলেও যেতে পারিনি। আজকে ৬৭তম জন্মদিনে আসতে চেয়েছি।এরমধ্যে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্যান্য সকলের সহযোগিতা কামনা করে আবেদন চিঠিপত্র জমা দিয়েছি।
আমাকে হুমকি ধমকি মারধর ও হত্যা চেষ্টার ঘটনাসহ মাজারে ঢুকতে না দেওয়ার কারণে এর আগে মামলা দায়ের করেছিলাম। তাদের মধ্যে বড় পীর দেওয়ান বাগী পীরের ছোট ছেলে মঞ্জুরে খোদার পালিত সন্ত্রাসী এ আর এস আরিফুর রহমান ও নিয়াজ মনসুর শাওন ছাড়াও আরো নাম না জানা অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা আমার ওপরে হামলা চালায় এবং মাজারে ঢোকতে বাঁধা দিয়ে আসছে। ওইসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলারর বিষয়ে শুনানি নিয়ে মাজার জিয়ারত এবং বিভিন্ন কাজে দেওয়ানবাগ শরীফে ঢোকার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমি আমার বড় পীরের স্ত্রী যিনি আমার মা তার মাজার জিয়ারত করতে এসেছি। আজকেও আমার আম্মিজানের জন্মদিন উপলক্ষে আমি সহ অন্যান্য ভক্তরা মাজারে এসেছেন। এখানে এসে তাদের এমন বাঁধা বিপত্তির হয়েছি।
পরে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঘটনাস্থলে এসে ক্ষুব্ধ ভক্ত শরিয়তুল্লাহ বিপ্লব ও তাঁর স্ত্রীসহ আগত ভক্তবৃন্দদের মাজার জিয়ারতে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেন।
আর/এইচ/সরে