
তীব্র গরমে বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ
সজল আহাম্মদ খান,আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ
সারা দেশের মত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ। গত এক সপ্তাহের উপর ধরে এ উপজেলায় তীব্রতাপদাহ আর গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের দিনের তাপমাত্রার রেকর্ড। প্রচন্ড তাপদাহে বাধ্য হয়ে বাইরে কাজে বের হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ দিন ধরেই এ উপজেলার তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গেছে। সর্বশেষ সোমবার দুপুর ১ টা পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। বিশেষ করে দুপুরের পর আগুন ঝরা রোদের তেজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। চলমান তাপদাহে সবচেয়ে কষ্টে পড়েছে খেটে খাওয়া নিমজুর, রিকশা- ভ্যান চালক ও কৃষকরা। তীব্র রোদে মাঠে টিকতে পারছে না কৃষক ও দিনমজুররা। অনেকেই কাজ করতে না পারায় অভাব অনটনে পড়ছে। আবার অনেকে তাদের সংসারের কথা ভেবে বাইরে যাচ্ছেন কাজ করতে। এদিকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে, খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না। ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের ক্ষেত্রে। তারা জীবিকার তাগিদে রাস্তায় বের হয়েছে রিকশা চালক, শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কিছু রিকশাচালক মাথার উপর ছাতা বেঁধে রিকশা চালাচ্ছেন। তবে বেশিরভাগই মাথায় রোদ নিয়েই যাত্রীদের তার গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই রোজা রেখে এই রোদের মধ্যে পরিশ্রমের কাজ করছেন। রিকশা চালক সানু মিয়া বলেন, আমি ১০ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছি। কিন্তু এত তাপদাহ দেখিনি। এই তাপদাহে গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একবার ভাবি গরমে রিকশা নিয়ে বের হবো না। কিন্তু গাড়ি না চালালে যে সংসার চলবে না। তাই বাধ্য হয়ে কষ্ট করে চালাতে হচ্ছে। ভ্যান চালক বাছির মিয়া জানান, রোজা রেখে খুব সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। কারণ সকালে আসলে কিছু আয় হয়। তীব্র তাপদাহে ভ্যান গাড়ি চালানো খুবই কষ্টকর। তাই দুপুর হলেই আর বাজারে থাকিনা। বাড়িতে চলে যায়। ভ্রাম্যমাণ ডাব বিক্রেতা মো: কালু মিয়া বলেন প্রতিদিন গ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে সকালে ডাব ক্রয় করে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসছেন। এই রোদের মধ্যে খোলা জায়গায় বিক্রি করা খুবই কষ্টকর। রোজায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে ডাব বিক্রি বেড়েছে। অনেকে ডাব কিনে বাসায় নিয়ে কেটে খায়। আবার কেউ কেউ ইফতারে ডাবের পানি খাওয়ার জন্য বোতলে করে পানি নিয়ে যায়। বর্তমানে প্রতিদিন তার ৭০ থেকে ৮০ পিস ডাব বিক্রি হয়। আকারভেদে এসব ডাব ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন তিনি। সবজি বিক্রেতা মো: হোসেন মিয়া বলেন, প্রতিনিদিন সকাল বেলা আড়ৎ থেকে সবজি ক্রয় করে ভ্যাগ গাড়ি দিয়ে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করছি। কিন্তু কয়েক দিন থেকে গরমে অবস্থা খুব খারাপ। রোজা থেকে এই তাপদাহে সবজি বিক্রি করতে ইচ্ছা হয় না খুবই কষ্ট লাগে। কিন্তু সংসারের কথা চিন্তা করে বের হতে হয়। মাথায় ছাতা ফুটিয়ে মুজিব সড়ক ধরে রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিলেন কাশেম মিয়া। তার বাড়ি পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকায়। তিনি বলেন, এই গরমে মাথার উপর কায়দা কইরা ছাতি লাগাইছি। চারদিন হয় ছাতি লাগাইছি। রোজা থেকে এত গরম সহ্য করা যায় না।