মোঃ রিপন হাওলাদার
রাজধানীর বিভিন্ন ব্যয়বহুল বেসরকারী হাসপাতালে রোগী স্থানান্তরের সাথে জড়িত বিপুল সংখ্যক দালাল চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমান আদালতে কারাদন্ড দিয়েছে র্যাব-৩।
সোমবার ৪ মার্চ ২০২৪ তারিখ সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগ, বহির্বিভাগ, বিভিন্ন ওয়ার্ড, কেবিন, বাগান গেটের প্রশাসনিক ব্লক, প্যাথোলজী সেকশনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে অভিযান পরিচালনা করে রোগীদের ভর্তিসহ বিভিন্ন কাজে হয়রানির মাধ্যমে অর্থ আদায় এবং কমিশন লাভের জন্য বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালে রোগী স্থানান্তরের সাথে জড়িত দালাল চক্রের সক্রিয় ৫৮ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে মোবাইল কোর্ট এর মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে এই কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শেষে
র্যাব ৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন ,চিকিৎসা সেবায় দেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগত রোগীদের ভর্তিসহ বিভিন্ন কাজে হয়রানির মাধ্যমে অর্থ আদায় এবং কমিশন লাভের জন্য চক্রটি নানা রকম অপতৎপরতা করে আসছিল।
দেশের অন্য যে কোন হাসপাতালে যেসব কঠিন রোগের সূ-চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়না, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দক্ষতার সাথে সে সব রোগের চিকিৎসা করা হয় ।
আর এমন চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে সারাদেশ থেকে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ এ হাসপাতালে আসেন। সাধারণ রোগীরা এ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য এসে প্রথমেই দালালদের খপ্পরে পড়ে। এতে চিকিৎসা নেয়ার আগেই রোগী এবং রোগীর সঙ্গে আসা আত্মীয়-স্বজনরা আর্থিক ক্ষতিসহ নানা হয়রানির শিকার হয়। ভূক্তভোগীদের বেশ কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন শাখায় গোয়েন্দা নজরধারী বৃদ্ধি করে র্যাব-৩।
তিনি আরো বলেন,এমনকি বিশেষায়িত হাসপাতালের রোগীদের অবস্থা যখন সঙ্কটাপন্ন, তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালই রোগী ও রোগীর স্বজনদের শেষ ভরসার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সারাদেশ থেকে আসা রোগীদের সব ধরনের রোগের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
বছরের ৩৬৫ দিন এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা সবার জন্য খোলা থাকে। সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশি বা জটিল যে কোনো রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং ক্তূভোগী হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের ঘিরে তৈরি হয়েছে একাধিক অসাধু চক্র। এ চক্রের সদস্যদের প্রথম লক্ষ্য থাকে গ্রাম ও মফস্বল শহর থেকে আসা নতুন রোগী এবং রোগীদের আত্মীয়-স্বজন। দালাল চক্রের সদস্যরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগত রোগীদের ভর্তি, সিট বরাদ্দ,পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট সংগ্রহ,
ট্রলি সেবা, হুইল চেয়ার সেবাসহ বিভিন্ন কাজে হয়রানির মাধ্যমে অর্থ আদায়, কমিশন লাভের জন্য রোগীদেরকে ভুল বুঝিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন ব্যয়বহুল বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে যায়। এছাড়াও তারা রোগীদেরকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার সঠিক রিপোর্টের কথা বলে বিভিন্ন ডায়াগোনস্টিক সেন্টারে নিয়ে অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দেয়।
ধৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, হুইল চেয়ার ও ট্রলি কেন্দ্রিক দালাল চক্রটি হাসপাতালের বিধি-বহির্ভূতভাবে মুমূর্ষু রোগীদেরকে সেবা দেওয়ার নামে রোগীর আত্মীয়স্বজনের নিকট হতে জোরপূর্বক অধিক পরিমাণ টাকা দাবী করতো। টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত মুমূর্ষু রোগী এবং রোগীর আত্মীয়স্বজনকে তারা জিম্মি করে রাখতো। এছাড়াও দালাল চক্রটি হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কেবিনের সীট পাইয়ে দেওয়ার জন্য অসহায় রোগী ও রোগীর আত্মাীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো।
এসকল দালালেরা হাসপাতালের প্রধান ফটক হতে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, ওটি, ওয়ার্ড এবং কেবিনের আশে পাশে সর্বত্র প্রকাশ্যে বিচরণ করতো। দালাল চক্রটি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা-গ্রহীতা রোগী ও রোগীর আত্মীয়-স্বজনদেরকে দ্রুত ও অপেক্ষাকৃত ভাল সেবা প্রদান করার মিথ্যা আশ্বাস দেয়া ছাড়াও অতি অল্প সময়ে ডাক্তারী সেবা দেয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতো।
এছাড়াও তারা রাতের বেলা রাস্তার টোকাই ও নেশাখোরদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে সেই রক্ত অসহায় রোগীর আত্মীয়-স্বজনের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতো। তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে রোগী ও রোগীর স্বজনদের আক্রমণাত্মক আচরণের শিকার হতে হতো।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানানো হয়।
আর/এইচ/সরে