সাঈদুল রহমান সাকিব : অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলউদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে নদীর তলদেশে টানেল যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ।শেষ হলো অপেক্ষার প্রহর, দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গে সুড়ঙ্গ দিয়ে খুলল আরেক দুয়ার।
শনিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে পতেঙ্গা প্রান্তে নেমে টানেল স্থাপনার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর টানেল দিয়ে পতেঙ্গা হয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে আনোয়ার প্রান্তে উপজেলার কেইপিজেড মাঠে গিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলাআওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, টানেলটি চট্টগ্রাম নগরীকে চীনের সাংহাই নগরীর মতো ‘দুটি শহরকে একটিনগরীতে’ পরিণত করবে এবং এটি দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করবে। শিল্পায়নের অপার সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন এবংব্যবসা–বাণিজ্যের প্রসার ঘটাবে এবং নগরীর পরিধিকে প্রসারিত করার মাধ্যমে সমগ্র অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন ঘটাবে।
তিনি আরো জানান, টানেলে পায়ে হেঁটে,সাইকেল, রিকশা, মোটরসাইক তিনচার যান চলাচল করা যাবে না। উদ্বোধনের পর থেকেজনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে এই টানেল।নিধারিত টোল
আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনবলেন, প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক বলয়ের আরেক স্বর্ণদুয়ার উন্মোচন করলেন। আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ফেনী থেকেচট্টগ্রাম হয়ে মহেশখালী, টেকনাফ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এক অর্থনৈতিক বলয় গড়ে তুলছেন।
এই টানেলকে ঘিরে নানা স্বপ্ন জল্পনা কল্পনা রয়েছে দুই প্রান্তের মানুষ তাছাড়া ঢাকা–চট্টগ্রাম–কক্সবাজার এর মধ্যে নতুন সড়কযোগাযোগের কাজে আসবে এই টানেল। বিদ্যমান কর্ণফুলী নদীর উপরের দুই সেতুতে চাপ কমাতেও সাহায্য করবে এই টানেল।
যেমন বর্তমান কোরিয়ান ইপিজেডের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের যাতায়াতের তুলনামূলক সুবিধাজনক রুট হবে এই টানেল। এছাড়াঢাকা–কক্সবাজার রুটে “৫০ কিলোমিটারের মতো দূরত্ব কমবে এবং সময় বাঁচবে এক ঘণ্টার মতো”
জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর দুই তীর সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটিনির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং টানেল প্রকল্পেরভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।
নির্মাণের আগে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সেহিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহনচলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সালনাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকিপাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনেরকমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।