কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: এস এম বাদল
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন,চোরের মার বড় গলা, মামার বাড়ির আবদার কারো রাখা যাবে না। দক্ষতা হলো একটি তালার চাবির মতো। ইহা ছাড়া হাজারভাবে চেষ্টা করলেও সফলতার তালা খুলবে না।’ঠিক তেমনিভাবে জনশক্তিকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি হবে এবং দরিদ্রতা দূর হবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মানব সম্পদে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়েই জামাত ইসলামের অগ্রযাত্রা। জামাত ইসলাম সরকারী দল গঠন করলে মা বোনদের বাড়ি থেকে বের হতে দেবেন না এমন কথা বলেন অন্যান্য দলের লোকেরা। বাস্তবতা তা নয় মা বোনরা তাদের ইচ্ছামত পোশাক পরিধান করবে এবং তাদের স্বকর্মে লিপ্ত থাকবেন। আমাদের দেশের অর্ধেক নর আর অর্ধেক নারী আমরা নারীদের পিছিয়ে রাখবো কেন? তারা সরকারি দল গঠন করলে মা বোনদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানান। লেখাপড়া শেষ করার পরে কোন শিক্ষার্থীকে ঘরের কোনে বসে থাকতে হবে না। তাদের সকলের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। কোন নেতার শরণাপন্ন হওয়া লাগবে না। তার নিজ যোগ্যতায় চাকরি হবে। লক্ষাধিক নেতা কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে এমন মন্তব্য করেন আমির সাহেব। ‘সম্প্রতি কথা উঠেছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না? কিন্তু নির্বাচন তো তাঁদের জন্য, যাঁরা মানুষকে সম্মান করেন। যাঁরা দেশবাসীকে ভালোবাসেন। যাঁদের কাছে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি আমানত। এই বিশ্বাসে যারা বিশ্বাসী নয়, তাদের কপালে নির্বাচন নই। তারা তিনটি নির্বাচনে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকাকালে তাণ্ডব চালিয়েছেন। তারা তো নির্বাচনেই বিশ্বাস করে না, তাদের আবার কিসের নির্বাচন?’ শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯ টার সময় কুষ্টিয়া শহরের কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতের জেলা শাখা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন। জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক মোঃ সুজাউদ্দিন জোয়াদ্দার (জেলা সেক্রেটারী ও জেলা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুষ্টিয়া জেলা শাখা)।এসময় আরো বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মোঃ ফরহাদ হুসাঈন (শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য, কুষ্টিয়া জেলা ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী)।জেলা আমীর অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন। আরো বক্তব্য রাখবেন জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাই, অতিজরুরি সংস্কারগুলো সাধন করে বর্তমান সরকার একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে তাঁরা যার যার জায়গায় চলে যান। এই নির্বাচনে জনগণ যাঁকে ভালোবাসেন, যাঁর ওপরে আস্থা রাখতে পারবেন, যাঁদের দেশের দায়িত্বটা দিলে দেশের মানুষকে সম্মান করবেন, ভালোবাসবেন তাঁদের বেছে নেবেন। দেশের মানুষের আমানত যাঁরা শ্বশুরবাড়ির নিয়ামত মনে করবেন না, প্রতিটি আমানতের পাই পাই করে হিসাব রাখবেন, তাঁদেরই তাঁরা বেছে নেবেন।’ জামায়াতের আমির বলেন, যারা চুরি করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে, যেমনটি গত সাড়ে ১৫ বছরে করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, তাদের দ্বারা বিদেশে পাচার করা অর্থের পরিমাণ ২৬ লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের পাঁচ গুণ। তাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবেন। ক্ষমতায় থাকাকালে তারা অন্যদের চোর বলেছে, আসলে কথায় আছে—চোরের মায়ের বড় গলা। যারা আকাম-কুকাম করেছে, বাংলাদেশকে ফোকলা করেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুটপাট করেছে, গণডাকাতি করেছে, তাদের প্রতি জনগণ আস্থা রাখবেন না। সরকারকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার আহ্বান জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী সিন্ডিকেট এখনো বসে আছে। আবার নতুন সিন্ডিকেটও জায়গা করে নিয়েছে। তবে সিন্ডিকেটকারীরা বলছে, আমাদের জমিদারি এখন নতুন জমিদারের হাতে চলে গেছে। আমাদের হাতে এখন আর নাই। তবে আমরা জামায়াতে ইসলামী নতুন-পুরাতন সিন্ডিকেট দেখতে চাই না। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে সিন্ডিকেট ধ্বংসে সরকারকে সাহায্য করতে চাই।’ তিনি সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে, দেরি না করে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়া জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে হতাহতদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এ ব্যাপারে সরকারের দৃশ্যমান উদ্যোগ দাবি করেন। কর্মী সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল সাড়ে ৯টায়। তবে ভোর থেকেই হাজারো কর্মী-সমর্থক জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করেন। বেলা ১০ টার মধ্যে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠ কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে যায়। লক্ষাধিক কর্মী সমর্থকদের স্লোগানে মুখরিত হয় কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠ।