
শাহরিয়ার সুমন,স্টাফ রিপোর্টার– চট্টগ্রামে চীনের বিআরআই (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) এর অধীনে ঋনের আওতায় দেশকেঋনের ভারে জর্জরিত না করা ও জীবাশ্ম জ্বালানীতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবিতে যুব সমাবেশ আয়োজন করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনআইএসডিই বাংলাদেশ, উপক‚লীয় জীবনযাত্রা, পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) ও বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এক্সর্টাল ডেবথ(বিডাব্লিউজিইডি)’।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) নগরীর পাঁচলাইশ থানার সম্মুখে অনুষ্ঠিত এ যুব সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
যুব সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নেরে সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদককাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রামকমিটির সহ–সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রিয় সদস্য মোঃসেলিম জাহাঙ্গীর, সার্ক মানবাধিকার ফোরামের বিভাগীয় সহ–সভাপতি এমএ আজিজ, নারী নেত্রী নবুয়াত আরা সিদ্দিকী, শাহীনশিরিন, লায়লা ইব্রাহিম, শামীম আরা লিপি, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, সহ–সভাপতি সাকিলুর রহমান, প্রচারসম্পাদক এমদাদুল ইসলাম, সদস্য তানিয়া সুলতানা প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, আগামী ১৮ অক্টোবর থেকে চীনের বেইজিংয়ে বিআরআই তৃতীয় সম্মেলন শুরু হবে, ১৯০টিরও বেশি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই সম্মেলনে। ২০১৬ সালে চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পে যোগ দেয় বাংলাদেশ। বেল্টরোড প্রকল্পের অর্থায়নে যাতে বাংলাদেশকে ঋণের জালে জড়িয়ে না ফেলে সে দিকেও বাংলাদেশকে সতর্ক দৃষ্ঠি রাখতে হবে। অনেকেরধারণা চীন এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বল্পোন্নত এবং দরিদ্র দেশগুলোতে বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করে দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলতে চায়।এর জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দর। এছাড়াও লাওস, অ্যাংগোলা, জিবুতি, কেনিয়া, মালদ্বীপ, পাকিস্তান ইতোমধ্যেচীনের ঋণের ফাঁদে পড়ে গিয়েছে।
নেতৃবন্দ দাবি করেন, চীনা ঋণের সকল চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। চীনা ঋণের আওতায় জীবাশ্ম জ্বালানিতে সকল বিনিয়োগবন্ধ করতে হবে। বাস্তবায়িত প্রকল্পে পরিবেশ প্রতিবেশ মানবাধিকার শ্রমাধিকার রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রেক্ষতিগ্রস্ত, নিহত ও আহতদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বাংলাদেশে ২০৫০ সাল নাগাদ শতভাগ নবায়ণযোগ্য জ্বালানিব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষে বিনিয়োগ করতে হবে। জীবাশ্ব জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বিআরআই (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) উন্নয়নের নামে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্তৃত্ত¡ প্রতিষ্ঠা ও চীনেরনিজস্ব বাণিজ্য সুসংহত করার পরিকল্পনায় মত্ত। উন্নয়নের নামে বাংলাদেশকে প্রকাশ্য ও গোপন ঋণের ফাঁদে ফেলে সুদ বাণিজ্য হাতিয়েনিতে ব্যস্ত। জ্বালানী স্বয়ংসম্পূর্ণ করার নামে জীবাশ্ম জ্বালানিতে তার বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করে তোলারপাশাপাশি দেউলিয়করণের দিকে ধাবিতে করবে। বিনিয়োগকৃত প্রকল্পে পরিবেশ প্রতিবেশ মানবাধিকার শ্রমাধিকারের দিকে তোয়াক্কা নাকরে প্রকল্প বাস্তবায়ন বন্ধ করতে হবে। প্রায় ২০০০ বছর আগে হান রাজবংশের সময় প্রতিষ্ঠিত ‘সিল্ক রোড’ এর ধারণা থেকে অনুপ্রেরণানিয়ে ২০১৩ সালে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নামে একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এই প্রকল্পেরআওতায় বিশ্বজুড়ে দরিদ্র দেশগুলোর অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন আধিপত্য বিস্তার করে চলছে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় বাংলাদেশকে আর ডলার সংকটের দিকে ঠেলে না দেবার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে ২০৪১ সালের মধ্যে ১৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। যেখানে ২০১৩ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগএসেছিলো ১৩৯ কোটি ডলার, ২০২২ সালে সেটা ২০২২ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ দাড়িয়েছে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার।দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৮২ শতাংশই গ্যাস, কয়লা ও ডিজেল ভিত্তিক এবং এর অধিকাংশই আমদানি নির্ভর। পিডিবি২০২১–২২ অর্থবছরে বিদ্যুত কেন্দ্র ভাড়া দিতে হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে আমদানি করা ৭৪৬মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। স্পট মার্কেটে দাম বাড়ায় সেটির আমদানি সীমিত করেছে সরকার। আশংকারবিষয় হলো এ বছরই এলএনজি আমদানিতে সরকারকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।