বৃন্দাবন মল্লিকঃ
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে চাঁদা চেয়ে না পেয়ে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে রেষ্টুরেন্ট ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুব তালুকদার ইমনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা মাহাবুব তালুকদার ইমন কর্তৃক আবু সাইদ নামে স্থানীয় এক রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীর কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করার একটি ফোনকল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া ফোনকল রেকর্ডকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা সমালোচনার জন্ম দেয়। এমনকি এনিয়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে রিকশা চালকদেরও মুখোরোচক মন্তব্য করতে শোনা যায়। এদিকে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীর কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবীর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ভিডিও বক্তব্যে নিজেকে নির্দোশ দাবী করে ফুড ক্যাপিটাল নামে ওই রেষ্টুরেন্টে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ তোলেন অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা মাহাবুব তালুকদার ইমন। এছাড়া ওই ভিডিও বক্তব্যে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবী করে কথোপকথনের ফোনকল রেকর্ডটি ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন তিনি। অন্যদিকে ভাইরার হওয়া ফোনকল রেকর্ডের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রেষ্টুরেন্ট মালিক আবু সাইদের কাছে ফোন করা হলে ছাত্রদল নেতা মাহাবুব তালুকদার ইমন তার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রেকর্ডে যা শুনেছেন সব সত্যই শুনেছেন। তাকে ১ লাখ টাকা দিলে সে আমাকে ব্যবসা করার জন্য আমাকে শেল্টার দিবে। যদি ১ লাখ টাকা না দেই তাহলে আমাকে ব্যবসা করতে দিবে না। আমার এখানে কোন অসামাজিক কার্যকলাপ হয় না। সব তাদের সাজানো। গত বুধবার দুপুরে ভুক্তভোগী রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ী আবু সাঈদ স্থানীয় সাংবাদিকদের ডেকে রেষ্টুরেন্ট আঙিনায় সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ভাইরাল হওয়া ফোনকল রেকর্ডটি নিজের নয় এবং রেকর্ডের সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই মর্মে দাবী করেন। একটি কুচক্রি মহল তার রেষ্টুরেন্টের ব্যবসা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে এবং ছাত্রদল নেতা মাহাবুব তালুকদার ইমনকে রাজনৈতিক ভাবে হেয় করার জন্য ঘটনাটি ঘটিয়েছে মর্মে সংবাদ সম্মেলনে দাবী করেন তিনি। অন্যদিকে বিএনপির রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও নিজে চাপ প্রয়োগ করে জোরপূর্বক রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ী আবু সাঈদকে সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য করেছেন মর্মে উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুব তালুকদার ইমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন খোদ রেষ্টুরেন্টটির মালিক আবু সাইদ। সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির একাংশের নেতাকর্মী বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগেই ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবী করে করে উল্টো তাকে সংবাদ সম্মেলন করানোর বিষয়টি ভয়ঙ্কর বলে আখ্যা দিয়েছেন। তারা বলেন, ক্ষমতার আসার আগেই যদি বিএনপি ও এর সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ ধরনের কার্যকলাপে জড়িত থাকে তাহলে বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের ভুল ধারণার জন্ম দিবে। যারা এধরণের কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বিএনপির ভবিষ্যত অন্ধকার বলে দাবী তাদের।
সংবাদ সম্মেলনে ভাইরাল হওয়া ফোনকল রেকর্ড ভিত্তিহীন ও রেকর্ডের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা নেই এমন দাবী করে বক্তব্য প্রদানের পেছনে বল প্রয়োগের সত্যতা নিশ্চিত করে ভুক্তভোগী ফুড ক্যাপিটাল রেষ্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী আবু সাইদ বলেন, যে ন্যায়ের পথে চলে তার উপর জুলুম অত্যাচারটাই বেশী। আমি ঘটনার শিকার।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিরাজদিখান উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুব তালুকদার ইমনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম ব্যস্ত থাকার কথা জানান। পরবর্তীতে পুনরায় ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে অনিহা প্রকাশ করেন এবং স্বাক্ষাত করতে বলে ফোন রেখে দেন।
সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক অহিদুল ইসলাম ওহিদের নিকট বিষয়টি অবগত আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলে,আমি এলাকায় ছিলাম না। রেষ্টুরেন্ট মালিকের বক্তব্য শুনে বিষয়টা জানতে পেরেছি। আসলে ইমনের পরিবারের অবস্থাতো বেশ ভালো। ওর চাচা ভাতিজারা প্রায় সবাই ইউরোপে থাকে। সে হিসেবে ওর দ্বারা এমন কাজ হওয়ার কথা না। তারপরও আমি এলাকায় ছিলাম না তাই বিষয়টা অতটা ভালো জানি না। আব্দুল্লাহ ভাই এসব ব্যপারে খুবি কঠোর। যদি এধরণের কোন কিছু করে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবে।
সিরাজদিখান থানার ওসি খন্দকার হাফিজুর রহমান জানান, এ ব্যপারে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তারিখ -১০/০১/২০২৫ ইং।