
এবাদুল হোসেন:
চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় একটি মামলার অনুসন্ধান চলাকালীন উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে, যা মিথ্যা মামলা বাণিজ্য এবং টাকার বিনিময়ে নিরীহ মানুষদের হয়রানির চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। গত ৪ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে কোতোয়ালি থানায় রুজু হওয়া একটি মামলার অনুসন্ধানী টিমের হাতে এমন প্রমাণ মিলেছে, যা মামলাটি কতটা অস্বচ্ছ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে তা নির্দেশ করে। মামলাটির বাদী মোহম্মদ রমজান, যিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আহত হয়েছিলেন। তবে মামলাটিতে ৮৩ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে, যা মামলাটির প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
অনুসন্ধানী টিমের তদন্তে উঠে এসেছে, মামলাটির ৬০ নম্বর আসামি ওসমান গণী (ওসমান এহতাশম) নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করেছেন। তিনি অনুসন্ধানী টিমকে জানান, তিনি স্বৈরাচারী সরকারবিরোধী বিভিন্ন লেখা লিখেছেন এবং ছাত্র-জনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু মামলায় তাকে স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষে এবং ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ওসমান গণী আরও জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে আমান উল্লাহ আমান নামের এক ব্যক্তির কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতেন, যিনি টাকার বিনিময়ে মিথ্যা মামলা তৈরি করে নিরীহ মানুষদের জেলে পাঠানোর কাজে জড়িত। তবে তিনি কখনো ভাবেননি যে আমান উল্লাহ তার বিরুদ্ধেও এমন চক্রান্ত করবে।
অনুসন্ধানী টিমের কাছে একটি গোপন সংবাদে জানা যায়, আমানুল্লাহ আমান নামের এই ব্যক্তি মামলাটির সাথে সরাসরি জড়িত না হলেও মামলা রুজু হওয়ার সময় বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন। থানার আশেপাশে তাকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে, যা তাকে সন্দেহের তালিকায় এনেছে। অনুসন্ধানী টিমের সাথে কথা বলার সময় আমান উল্লাহ দাবি করেন, তিনি টাকার বিনিময়ে মিথ্যা মামলা তৈরি করে অনেক নিরীহ মানুষকে জেলে পাঠিয়েছেন এবং এভাবে তার স্বার্থ উদ্ধার করেছেন। তিনি আরও জানান, যে কারো নামে মামলা দেওয়া যাবে টাকা যেমন হবে তেমন মামলা হবে, নাম প্রতি ২০ হাজার দিলে হবে ধর্ষণ মামলা, আর ১০ দিলে হবে মারা-মারি মিথ্যা মামলা তৈরি করতে সক্ষম, যদিও উক্ত আসামী সম্পূর্ণ নির্দোষ।
ওসমান গণী বলেন, “আমান উল্লাহ আমান দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিনিময়ে মিথ্যা মামলা তৈরি করে নিরীহ মানুষদের হয়রানি করছে। আমি তার কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতাম, কিন্তু কখনো ভাবিনি সে আমার বিরুদ্ধেও এমন চক্রান্ত করবে। এই মিথ্যা মামলা বাণিজ্যের প্রতিকার চাই।”
এবিষয়ে কোতোয়ালি থানায় রুজু হওয়ায় মামলার বাদী মোহাম্মদ রমজানের দেওয়া ০১৮৫০৪৯৭৪৪৬ নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেলে নাম্বারটি বন্ধ থাকায় ব্যর্থ হয় অনুসন্ধানী টিম।
এই ঘটনাটি চট্টগ্রাম আদালতে মিথ্যা মামলা বাণিজ্যের একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, যেখানে টাকার বিনিময়ে নিরীহ মানুষদের হয়রানি করা হচ্ছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলাগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। অনুসন্ধানী টিমের তদন্তে উঠে আসা তথ্যগুলো প্রশ্ন তুলেছে, কিভাবে একটি মামলায় এত বেশি সংখ্যক মানুষকে আসামি করা যায় এবং কিভাবে একজন ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে মিথ্যা মামলা তৈরি করে নিরীহ মানুষদের জেলে পাঠাতে পারে।
এই ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মিথ্যা মামলা বাণিজ্য বন্ধ করতে এবং নিরীহ মানুষদের হয়রানি থেকে রক্ষা করতে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের মামলাগুলো নিয়ে গভীর তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি আস্থা রাখতে পারে।