
জুনায়েদ হাসান , চট্টগ্রাম
পৈতৃক জমি ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জের ধরে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির মিথ্যা মামলা দিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও হয়রানি করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মামলার বিবাদী ভুক্তভোগী বিবি ফাতেমা তুজ জোহরা।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন হিলভিউ রোড়স্থ চৌধুরী বাড়ির মরহুম আবু তাহের চৌধুরীর প্রথম স্ত্রীর সন্তান এমরানুল ইসলাম তার সৎ বোন বিবি ফাতেমা তুজ জোহরাসহ পরিবারের আরো তিন সসদ্যের বিরুদ্ধে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উল্লেখ করে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চট্টগ্রামে একটি সি,আর ( মামলা নং-৩৮২/২০২৪) মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছরের ৬ জুন সকাল ১১ টায় বায়েজিদ থানাধীন বাদীর বসত ঘরের সামনে ভোগ দখলীয় সম্পত্তিতে ঘর নির্মাণ করকালীন সময়ে বিবাদীগন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বাদীকে গালমন্দ করেন এবং এখানে ঘর বাধিলে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে জানান। অন্যথায় ঘর নির্মাণ করতে দিবেনা বলে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিবাদীগন বাদী এমরানুল ইসলামকে মারধর করেন। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে বিবাদীগন ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায় এবং যাওয়ার মুহুর্তে বাদীকে চাঁদা না পেলে ঘর করতে দিবেনা বলে হুমকি প্রদান করেন।
এবার ঘটনার সত্যতা জানতে অনুসন্ধানে সরেজমিনে গেলে বেরিয়ে আসে ভিন্ন তথ্য। প্রতিবেদক সরেজমিনে মামলায় উল্লেখিত ঘটনাস্থলে গেলে কোন নির্মাণাধীন ঘরের সন্ধান পায়নি। এমনকি বিগত কয়েক মাসের মধ্যে এখানে কোন ঘর নির্মাণ করার কাজ চলেছিলো কিনা তারো কোন চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়নি। বরঞ্চ সেখানে যেসব ঘর রয়েছে তাও অনেক বছর আগের। আর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী এমরানুল ইসলামের স্ত্রী শাহানাজ । যা অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
সম্প্রতি চাঁদা দাবির ঘটনার সত্যতা জানতে এমরানের বাসায় গেলে তার দেখা পাওয়া যায়নি। তবে কথা হয় তার স্ত্রী শাহানাজের সাথে। ঘটনার দিন কি হয়েছিলো এবং বিবাদীরা কেন চাঁদা দাবি করেছিলো তা জানতে চাওয়ায় তিনি উত্তরে এসব বিষয়ে জানেন না বলে জানিয়েছেন প্রতিবেদককে। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমার স্বামীকে জিগ্যেস করেন তিনিই সব জানে, আমি আপনাকে কিছুই বলতে পারবোনা। তাহলে আপনাদের বসত ঘর নির্মাণের বয়স কত জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন ৪/৫ বছর হবে, অন্যদিকে পাশ থেকে তার জা সুরাইয়া প্রতিবেদককে উত্তর দিয়ে বলেন ১৪/১৫ বছর হবে। সেখানেই উপস্থিত মামলার বাদী পক্ষের ২য় নাম্বার স্বাক্ষী এমরানের স্ত্রীর বোন পারভিন। তার কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুনের ৬ তারিখ বিবাদীরা অস্ত্র-শস্ত্রসহ সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এখানে হামলা করতে আসে, সিসিটিভির কোন ফুটেজ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি নেই বলে জানান এবং এসব বিষয়ে বাদীর সাথে কথা বলতে বলেন,অথচ ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা আছে দেখা গেছে।
এদিকে বাদী এমরানুল ইসলামকে মুঠোফোনে মামলায় উল্লেখিত ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে কথা বলতে রাজি নন বলে জানান প্রতিবেদককে এবং এসব বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কাশেম জানান, মামলা তদন্ত চলমান রয়েছে, যেটা সত্য পাবো সেটা তদন্ত রিপোর্টে দিব। তবে তিনি চাঁদা দাবির কোন ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়ে বিষয়টি তাদের ভাই বোনের মধ্যে জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধ বলে জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশপাশের কয়েকজন দোকানী ও বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা গেছে এমরানুলের শশুর বাড়ি কাছে হওয়ায় তার শশুরের পরিবারের বলে তারা প্রায়শই এমন করে। এছাড়াও তারা মামলাবাজ বলে জানান আসপাশের বাসিন্দারা, তাদের ভয়ে কেউ সত্য কথা বলার সাহস পায়না। তারা প্রতিবেদককে নাম প্রকাশ না করার বিশেষ অনুরোধ জানান।
মামলার ৩ নং বিবাদী বিবি ফাতেমা তুজ জোহরা সরেজমিন বার্তাকে জানান, তার ভাই এমরানুল ইসলামের দায়ের করা মামলাটি মিথ্যা ও সাজানো মামলা। তিনি জানান আমার ভাইদের সাথে আমাদের পৈতৃক জমি ভাগাভাগির বিরোধ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে দীর্ঘদিন। এছাড়া অন্যকোন ঝামেলা নেই আমাদের সাথে। তাও আদালত যা সিদ্ধান্ত দিবে আমরা তাই মেনে নিব। আরেকটি বিষয় হচ্ছে এখানে এমন কোন ঘর নির্মাণ হয়নি, যেটি নিয়ে আমরা চাঁদা চাইবো। বরঞ্চ বেশ কয়েকমাস আগে আমার ঘর নির্মাণের সময় আমার ভাই এমরানুল ইসলাম আমার কাছ থেকে একাধিকবার তার স্ত্রীর চিকিৎসার নামে টাকা নিয়ে গেছে। তাহলেতো আমিই তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দিতে পারতাম, উল্টো মিথ্যা নাটক সাজিয়ে আমি, আমার বৃদ্ধা মা আর প্রবাসী ভাইকে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। আমি সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সঠিক তদন্ত কামনা করছি।
মামলার অন্যান্য বিবাদীরা হলেন, ভাই ১ নং বিবাদী হাবিবুর রহমান, ২ নং বিবাদী ইসমাইল চৌধুরী ও ৪ নং বিবাদী মাতা: রোকেয়া বেগম। তারা উভয়ে বাদী এমরানুল ইসলামের পিতা আবু তাহেরের দ্বিতীয় পরিবার।