
ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। চলছে এখন গ্রীষ্মকাল। একদিকে আবহাওয়া পরিবর্তনের শিকার আমরা। তার মধ্যে আবার গ্রীষ্মকালের প্রচন্ড তাপ। জনজীবনে হিমশিম। ঘর থেকে কর্মস্থল কোথাও যেন শান্তির দেখা নেই। একটুখানি শীতল খুঁজতে মরিয়া হয়ে গেছে ক্লান্ত মন প্রাণ সব কিছু। ঠান্ডা পানিতেও যেন তৃষ্ণা মেটে না। নেই কোথাও একটুখানি শীতল ছায়া। যত দূর যায় রোদ্দুর আর রোদ্দুর। তারমধ্যে লোডশেডিংয়ের ভয়াবহতা কোনভাবেই কাটার কোনো আশঙ্কাই নেই। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলেও চারঘন্টা তার দেখা নেই। রাত্রিকালীন ভয়াবহ লোডশেডিং যেন প্রতিনিয়ত আশীর্বাদ। বিত্তশালীদের শীতল ব্যাবস্থা ঘরে বা অফিসে থাকলেও দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে সাধারণ মানুষ। দেশের অধিকাংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অচিরেই বন্ধ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় কোথাও যেন একটু স্বস্তির দেখা মিলছে না সাধারণ মানুষের। সরকারি প্রতিষ্ঠান পিডিবি তো ব্যর্থ প্রায়। বিকল্প খোঁজারও কোন উপায় নেই। ব্যাটারি চালিত চার্জিং ফ্যান এর মূল্য অনেক বেশি কিন্তু চার্জার ফ্যান থাকলেই যে বিকল্প ব্যবস্থা করা যাবে লোডশেডিংয়ের কারণে সেটা সম্ভব নয়। ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আইপিএস ইউপিএস সিস্টেম গুলোও বিকল হয়ে পড়েছে। তাই এখন সাধারন মানুষের একমাত্র ভরসা আদিকালের হাতপাখা। হাতপাখা বাঙালির চিরাচরিত জীবনের সাথে মিশে আছে ঐতিহ্য হয়ে। ৭০ থেকে ৮০ দশকের সময় একমাত্র হাতপাখাই ছিল সর্বমহলের জীবনযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু।
মাঠে ঘাটে প্রান্তরে হাট-বাজারের বিবাহ অনুষ্ঠান সহ ঘরের কোণে কোথায় ছিল না এই হাতপাখা? বিয়ের সময় উপহার হিসেবেও পাওয়া যেত হাতপাখা। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেলেও বর্তমান সময়ে এই হাতপাখা কেনার হিড়িক পড়েছে বাজারে।
হাতপাখা এখন বহু মূল্যবান বস্তু। স্থান ভেদে কোথাও তালপাতার হাতপাখা ২৫০-৩০০টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হচ্ছে। বেত বা কাপড়ের হাত পাখা একটু কম মূল্যে পাওয়া গেলেও টেকসই খুবই কম। পাশাপাশি প্লাস্টিক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন হাতপাখা তৈরি হয়ে যাচ্ছে বাজারে। তাই ব্যক্তি ও পকেটের অবস্থান বুঝে যে যার মত লুফে নিচ্ছেন পছন্দের হাতপাখা। অবশ্যই হাতপাখার একটি পজেটিভ দিকও রয়েছে। গুনতে হচ্ছে না কোনো বিদ্যুৎ বিল। তাই জনজীবনে একমাত্র শেষ ভরসা এখন এই হাতপাখা।