
কাজী তানভীর:
বে-আইনী মাটি ব্যাবসায়ীদের ট্রাক্টর, বুলডোজার, ইত্যাদি ইত্যাদি ভারী গাড়ি চলাচলের কারণে জনসাধারণের যাতায়াতের কাঁচা সড়কের হয়েছে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। রাস্তা সংস্কারের অনুরোধ করায় কাজী ইমরান নামের এক যুবককে ব্রিজের উপর থেকে ফেলে হত্যাচেষ্টা করেছিল মাটিকাটা চক্র। এর আগে তাকে মেরে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল কব্জির ও কোমরের হাড়।
২৫শে ফেব্রুয়ারী রাতে এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার গুণবতী ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামে। খবর পেয়ে চৌদ্দগ্রাম সেনা ক্যাম্প থেকে তদন্তে এসেছিল ১৪ সেনা সদস্য। কনকাপৈত পুলিশ ফাঁড়ির ওসি জনাব আবু তাহের জানিয়েছেন, এঘটনায় দুই গ্রুপের লোকজন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন থানায়। এদিকে ৬ই মার্চ ইউনিয়নের বাজারে এক শালিসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির জনাব ইউসুফ মেম্বার।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে স্থানীয় জনগণ নিজস্ব অর্থায়নে একটি কাঁচা সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেছিল। তবে, সরেজমিনে দেখা গেছে মাটির ব্যাবসায়ীদের ভারী গাড়ি চলাচলের কারণে রাস্তাটি কোথাও কোথাও ভেঙে প্রায় কৃষি জমির সাথে মিশে গেছে। এছাড়া অন্তত এক হাঁটু সমান ধুলাবালি জমেছে রাস্তায়। এতে অহরহ দূর্ঘটনার কবলে পড়ছে গাড়ির ড্রাইভার ও যাত্রীরা। নূন্যতম হাঁটার পরিবেশও সেখানে অবশিষ্ট নেই। আশঙ্কা করা হচ্ছে সংস্কার করা না হলে আসন্ন বর্ষায় রাস্তাটি আরও বেশি বিপর্যয়ের শিকার হবে। প্রতিকার পেতে স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি জনাব শফিকুর রহমান (শফিক মাষ্টার) কথা তোলেন রাস্তাটির ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে মাটিকাটা চক্রের সদস্য আবু নসর ও অজ্ঞাত কয়েকজন মিলে শফিক (মাষ্টার)’কে হেনস্থা ও মানহানি করেন। এরপর মাটিকাটা চক্রের সদস্য আলাউদ্দিন ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে স্থানীয়দেরকে ফোন দিয়ে মাটিকাটায় বাঁধা না দিতে বলেন। অপরদিকে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জনাব মোহাম্মদ সেলিম মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘২৫শে ফেব্রুয়ারীর আগেই এক অভিযানে মাটিকাটা চক্রকে মাটিকাটায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।’
এক পর্যায়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নির্দেশমতো ২৫শে ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) রাতে মাটিকাটার বুলডোজার নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন মাটিকাটা চক্রের সদস্য মমিন। এঘটনা দেখতে পেয়ে স্থানীয় যুবক কাজী ইমরান রাস্তার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন মমিনের নিকট। কিন্তু প্রতিক্রিয়ায় মমিন ইমরানকে হুমকি ধমকি দেন। বিতর্ক শুনে ঘটনাস্থলে ইমরানের ভাই কাজী ইস্রাফিল সহ শফিক মাষ্টারের বড় ছেলে কাজী শাহীন, কাজী আসিফ সহ স্থানীয় আরও কয়েকজন ব্যাক্তি উপস্থিত হন। মাটিকাটা চক্রের সদস্য আবু নসর, সেলিম মেম্বার, মাসুদ মেম্বার, আলাউদ্দিন, জাহাঙ্গীর সহ আরও অজ্ঞাত কয়েকজনকে ফোন করে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসেন মাটিকাটা চক্রের মমিন। চক্রটি এসেই স্থানীয়দের উপর আক্রমণ করেন। এই আক্রমণে শাহীনকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা হয় এবং ইমরানের উপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। শেষে ইমরানকে ব্রিজ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে হত্যাচেষ্টা করা হয়। এতে ইমরানের কব্জির ও কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়েছে।
স্থানীয়রা আহত ইমরানকে তাৎক্ষণিক চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এক্সরে করালে রিপোর্টে ইমরানের উল্লিত শারীরিক ক্ষতি প্রকাশ পায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য ইমরানকে কুমিল্লার টাওয়ার হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
জানা গেছে, ইমরানের উপর হামলাকারী নসর আগেও বেশ কয়েকজনের উপর হামলা করেছেন। তাই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পক্ষে পুরো এলাকাবাসী। বর্তমানে ইমরান ও তার এলাকাবাসী শুধু ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখছে এবং ছয় তারিখের বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে।