দেলোয়ার হোসেন
ঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আতিকুল্লাহ চৌধুরীকে নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেয়ার মূল পরিকল্পনাকারী দীর্ঘদিন পলাতক মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী তানু’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব ১০
গত (১০ই ডিসেম্বর ২০১৩)ইং বিকাল ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও কোন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৎকালীন আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক উল্লাহ চৌধুরী তার ইউনিয়ন পরিশদের কাজের জন্য দক্ষিন কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকার উদ্দেশ্যে তার নিজ বাসা বের হয়। ঐদিন রাতে ভিকটিম আতিক উল্লাহ চৌধুরী বাসায় ফিরে না আসলে তার পরিবারের লোকজন তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পায়। এতে পরের দিন ১১ ডিসেম্বর তারিখ তার আতিক উল্লাহ চৌধুরী এর ছেলে দক্ষিন কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন।
থানায় অবস্থানকালে আতিক উল্লাহ চৌধুরী এর ছেলে সংবাদ পায় কোন্ডা ১০ম শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের দেয়াল পরে আছে। উক্ত সংবাদ পেয়ে আতিক উল্লাহ চৌধুরীর ছেলে উক্ত স্থানে গিয়ে একটি আগুনে পোড়া বিকৃত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায়। পুলিশের সহায়তায় লাশ উলট পালট করে লাশে সাথে থাকা একটি এটিএম কার্ড ও ইউনিয়ন পরিষদের কাগজ পত্র দেখে আতিক উল্লাহ চৌধুরী ছেলে তার বাবার লাশ বলে সনাক্ত করে। পরবর্তীতে আতিক উল্লাহ চৌধুরীর ছেলে বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে ঢাকা জেলার দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দয়ের করেন। যাহার মামলা নং ২১,
উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা তদন্ত শেষে পুলিশ গুলজার ও তানুসহ ০৮ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করে। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রমানে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় গত ০২/১২/২০২০ ইং তারিখ আসামী ১। তাজুল ইসলাম তানু, ২। গুলজার, ৩। মোঃ জাহাঙ্গীর ওরফে জাহাঙ্গীর খাঁ, ৪। আহসানুল কবির ইমন, ৫। রফিকুল ইসলাম আমিন ওরফে টুন্ডা আমিন, ৬। শিহাব আহমেদ শিবু, ৭। মোঃ আসিফ’দেরকে উক্ত আতিক উল্লাহ চৌধুরী হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন। আসামী তাজুল ইসলাম তানু, রফিকুল ইসলাম আমিন ওরফে টুন্ডা আমিন, শিহাব আহমেদ শিবু, মোঃ আসিফ পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যু করেন। ইতিপূর্বে অন্যান্য আসামীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হতে গ্রেফতার হলেও উক্ত মামলার মূল পরিকল্পনাকারী তাজুল ইসলাম তানু আত্মগোপন করে ছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় অাজ( ২৮ মে ২০২৩ ) ইং তারিখ র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকার বংশাল এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আতিকুল্লাহ চৌধুরীকে নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেয়ার মূল পরিকল্পনাকারী দীর্ঘদিন পলাতক মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী তাজুল ইসলাম তানু(৩৫)’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী উক্ত ঘটনার সাথে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। সে আরও জানায় ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কোন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৎকালীন আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক উল্লাহ চৌধুরী সাথে নির্বাচনের প্রার্থিতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ নিয়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত অপর আসামী গুলজারের সাথে বিরোধ চলছিল। শত্রুতার জেরধরে গুলজার বেশকয়েকবার আতিক উল্লাহ চৌধুরী’কে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান করেছিল। ভিকটিম আতিক উল্লাহ চৌধুরী তার কথায় কোন কর্ণপাত না করলে গুলজার ও তাজুল ইসলাম তানু মিলে আতিক উল্লাহ চৌধুরীর হত্যার পরিকল্পনা করে।
৮। গ্রেফতারকৃত আসামী তাজুল ইসলাম তানুর পরিকল্পনা অনুযায়ী গুলজার আতিক উল্লাহ চৌধুরীর গতিবিধি লক্ষ রাখার জন্য সম্পা নামক এক নারীকে নিয়োগ করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১১/১২/২০১৩ ইং তারিখ রাতে আতিক উল্লাহ চৌধুরী’কে তার সাথে দেখা করা জন্য কোন্ডা হাসপালের গেটে আসার জন্য বলে। আতিক উল্লাহ চৌধুরী সম্পার কথা মত রিক্সাযোগে হাসপাতালে গেটে আসা মাত্র পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা গুলজার ও তানু আতিক উল্লাহ চৌধুরী’কে রিক্সা থেকে নামিয়ে রিক্সা বিদায় করে দেয়। গুলজার ও তানু তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলে আতিক উল্লাহ চৌধুরী’কে হাসপাতালে দক্ষিন সীমানা বরাবর রাস্তায় নিয়ে তানুর নেতৃত্তাধীন ভাড়াটে খুনি মোঃ জাহাঙ্গীর ওরফে জাহাঙ্গীর খাঁ, আহসানুল কবির ইমন, রফিকুল ইসলাম আমিন ওরফে টুন্ডা আমিন, শিহাব আহমেদ শিবু, মোঃ আসিফ’দের হাতে তুলে দেয়। অতঃপর তাজুল ইসলাম তানুসহ ভাড়াটে খুনিরা আতিক উল্লাহ চৌধুরী মুখ চেঁপে ধরে কোলে করে হাসপাতালের পশ্চিম পাশের সীমানা ঘেঁষে নিচু জমিতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে ভিকটিমকে তার পরিহিত পাঞ্জাবী ছিড়ে মুখ বাধিয়া অন্যান্য আসামীদের সহায়তায় তানু মুখ চেপে ধরে গলা টিপে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে মৃতদেহের পরিচয় গোপন করা জন্য তানুর নির্দেশে আসামীদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের পেট্রোল দিয়ে মৃত আতিক উল্লাহ চৌধুরী এর দেহে ছিটিয়ে দিয়ে মৃতদেহটিকে পুড়িয়ে ফেলে পালিয়ে যায় বলে জানা যায়। এছাড়াও গ্রেফতরকৃত আসামীর বিরুদ্ধে ০১টি অস্ত্র মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।