কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: এস এম বাদল
কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজ চাষ ও চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। পেয়াঁজের দাম বাড়ায় এবার বেশি পরিমাণে গুরুত্ব দিয়ে জমিতে যত্ম সহকারে চাষে ব্যতিব্যস্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলার পেয়াঁজ চাষিরা। তবে দেশীয় পেয়াজ এর চেয়ে হাইব্রিড জাতের কিং পেঁয়াজ বেশি লাগানো হচ্ছে। চাষিরা বলছেন অল্প খরচে ভালো ফলন হওয়ায় এই হাইব্রিড জাতের কিং পেঁয়াজ লাগানো হচ্ছে। মঙ্গলবার ২৪ ডিসেম্বর সকাল থেকে কুমারখালী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা তীব্র শীত উপেক্ষা করে পেঁয়াজের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পেঁয়াজের খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা। তাঁরা জানান, কাকডাকা ভোরে উঠে সারা দিন ধরে পেঁয়াজখেত প্রস্তুত করতে হয়। জমি চাষ দেওয়া পর জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে পেঁয়াজের চারা রোপনের উপযুক্ত করা হয় । ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসলি জমিতে দলবেঁধে পেয়াঁজের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। পেঁয়াজের চারা রোপনের জমিতে একসাথে প্রায় ২০-৩০ জন কৃষক পেঁয়াজের চারা রোপন করে থাকেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার করিমপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, গতবছর আমি ১৫ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। পেঁয়াজের দামও ভালো পেয়েছি তাই এবছর পেঁয়াজের অনেক দাম থাকায় এবারেও ৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগাচ্ছি। শ্রমিক ঠিকমতো না পাওয়ায় নারী শ্রমিকদের দিয়েও পেঁয়াজ লাগাচ্ছি। কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রাম এলাকার আতিয়ার রহমান জানান, এবারে পেয়াজ চাষে খরচ বাড়বে অনেক। কারণ গতবার ১ কেজি পেঁয়াজ বীজ কিনেছিলাম সাড়ে ৩ হাজার টাকায় এবার সেই পেঁয়াজ বীজ কিনতে হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার টাকায়। আবার যদি ভালো দাম না পায় তাহলে লোকসান গুণতে হবে। চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়ায় লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলার পেঁয়াজচাষিরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন খেত পরিচর্যায়। চাষিদের আশা, সবকিছু ঠিক থাকলে এবার তাঁরা ভালো ফলন পাবেন। কুষ্টিয়া শহরতলীর মোল্লাতেঘরিয়ার মাঠে সবাই দল বেধে একটি লাইনে একসাথে পেঁয়াজের জমিতে বসে পেঁয়াজের চারা রোপণ করছেন। এবার পেঁয়াজের দাম মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে চাষিরদের। অন্য সব ফসলের পাশাপাশি পেঁয়াজ চাষের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন চাষিরা। গতবারের চেয়ে এবার বেশি জমিতে পেয়াজের আবাদ হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এজন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হচ্ছে।বাংলাদেশের যে পাঁচটি জেলায় পেঁয়াজের বেশি উৎপাদন হয় তার মধ্যে কুষ্টিয়া একটি। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার কুষ্টিয়ার পেঁয়াজ দিয়ে দেশের বড় একটি চাহিদা মেটানো যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কুমারখালী উপজেলার বাধবাজার এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে পেঁয়াজের চারা উত্তোলনের পর জমিতে রোপণ করা হয়। জনপ্রতি ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা করে কাজ করা হচ্ছে। তবে একযোগে কাজ শুরু হওয়ায় শ্রমিকের চাহিদা বেশি থাকায় দাম একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজ রোপণ সম্পন্ন হবে। কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রাম এলাকার পেঁয়াজ রোপণকারী রবিউল ইসলাম বলেন, এ বছর দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন। উপজেলার প্রতিটি গ্রামের মাঠেই পেঁয়াজ চারা রোপণের ধুম পড়ে গেছে। প্রতিদিন ভোর থেকে পেঁয়াজের চারা উত্তোলনের পর জমিতে রোপণ করা হয়। মাঠ জুড়ে এখন আনন্দের অনুভূতি প্রকাশ করেন পেঁয়াজের চারা রোপনকারীরা। পুরো মাঠে শুধু লোক আর লোক প্রত্যেকে আনন্দ উল্লাসে মেতে আছেন। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফী মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান বলেন, পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রণোদনা প্রদান এবং প্রযুক্তির ব্যবহার ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে পেঁয়াজ চাষে কৃষকরা লাভবান হবেন। দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরই কৃষকরা পেঁয়াজ খেত থেকে উত্তোলন শুরু করবে। উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হলে পেঁয়াজ চাষে আরও অনেকে আগ্রহী হবেন বলে মনে করছেন কৃষকেরা।