
তানজির আহমেদ সাকিব,
কালাই উপজেলা প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটে কালাইয়ে আলুর নায্য মূল্যের দাবিতে এবং হিমাগারে অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে কালাই বাসষ্ট্যান্ড চত্বর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে স্থানীয় কৃষকরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিলটি জয়পুরহাট-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে যায়। সেখানে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কালাইয়ের সমন্বয়ক তানিম সরকারের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ছাত্র প্রতিনিধি মোস্তাক আহম্মেদ রাতুল,এহসান নাহিদ,শাহিনুর আলম,কৃষক আব্দুল গাফফার,মাহবুবুর রহমানসহ প্রমুখ।
এসময় বক্তরা বলেন, আলু তোলার ভরা মৌসুম এখনও আসেনিই। মাঠ জুড়ে এখন চলছে আগাম জাতের আলু তোলার কাজ। এরইমধ্যে হিমাগারগুলির আলু সংরক্ষণের বুকিং কার্ড শেষ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ। আলু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রের সাথে যোগসাজশ করে হিমাগার কর্তৃপক্ষ এ ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের এ অসৎ উদ্দেশ্য কিছুতেই বাস্তবায়ণ করতে দেওয়া হবেনা। আমাদের দাবি, কৃষকদের চাহিদামাফিক হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কিছুতেই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যাবে না। আলু তোলার মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ, কৃষকদের আলু তোলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কৃষকদের জন্য হিমাগারে আলুর সংরক্ষেনের ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। এর কোন ধরণের ব্যত্যয় হলে, কৃষকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ভবিষ্যতে বড় ধরণের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, হিমাগারের ভাড়া অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে কৃষকদের সংকটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এতে বিশেষ করে প্রান্তিক পযার্য়ের কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বেন, যার প্রভাব পুরো অর্থনীতিতে পড়বে।
পরিশেষে বিক্ষোভকারীরা হিমাগারের বাড়তি ভাড়া বাতিল করে পূর্বের হার বহাল রাখার দাবি জানান এবং এ বিষয়ে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহান এর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এ উপজেলার কয়েকজন কৃষকরা বলেন, এ বছর আলু উৎপাদনের খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে। বীজ, সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য উপাদানের মূল্য আগের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় এমনিতেই তারা লোকসানের মুখে। তার ওপর হিমাগারের ভাড়া দ্বিগুণ বৃদ্ধি করায় কৃষকদের জন্য আলু সংরক্ষণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। গত বছর ৭০ কেজির আলুর বস্তা সংরক্ষণের ভাড়া ছিল ২৮০ টাকা, যা এ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬০ টাকা।
তারা আরো বলেন, এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে, যাতে তারা কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হন এবং পরে হিমাগার মালিকরা সেই আলু মজুদ করে উচ্চমূল্যে বাজারে বিক্রি করতে পারেন।
এ উপজেলার আলুচাষি রুবেল আহম্মেদ বলেন,১১টি কোল্ড স্টোরেজে প্রায় ৯ লাখ বস্তা আলু সংরক্ষণ করা হয়। এক বস্তা থেকে ২৮০ টাকা বেশি লাভ করলে, পুরো মৌসুমে হিমাগার মালিকরা প্রায় ২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা কৃষকদের পকেট থেকে নিয়ে নেবে। এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।
আরেক আলুচাষি ইসমাইল হোসেন বলেন,হিমাগার মালিকদের উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষকরা আলু সংরক্ষণ করতে না পারলে তারা কম দামে আলু কিনবে এবং পরে বেশি দামে বিক্রি করবে। এটা হতে দেওয়া হবে না।
উপজেলা ছাত্র সমন্বয়ক মোস্তাক আহম্মেদ রাতুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,দেশের কৃষকরা এমনিতেই সংকটে রয়েছে। তার ওপর এই অন্যায্য ভাড়া বৃদ্ধি তাদের আরও বিপদে ফেলছে। হিমাগার মালিকরা নিজেদের স্বার্থে কৃষকদের সর্বস্ব লুটতে চাইছে, কিন্তু আমরা তা হতে দেব না।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক এহসান আহমেদ নাহিদ বলেন,এই ভাড়া বৃদ্ধি সরাসরি কৃষকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। যদি অবিলম্বে মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে আরও বড় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। প্রয়োজনে পুরো জেলা অচল করে দেওয়া হবে।