
মোজাহের ইসলাম নাঈম
ব্যুরো চীফ নোয়াখালী।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনের কাজ দেখিয়ে তা না করেই প্রায় ছয় লাখ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী ও উপজেলা প্রকৌশলী কাজী কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলার রাজস্ব তহবিল থেকে পুরাতন ভবন সংস্কার প্রকল্পে পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এজন্য ঠিকাদার মেসার্স মিলন এন্টারপ্রাইজকে ২০২৪ সালের ৮ জুলাই কার্যাদেশও প্রদান করা হয়। এছাড়া কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে ওই বছরের ২০ আগস্ট চেকের মাধ্যমে বরাদ্দের টাকা তুলে নেওয়া হয়।
তবে মেসার্স মিলন এন্টারপ্রাইজের মালিক মিলন বলেন, এ কাজের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী কাজী কামরুল ইসলামের মাধ্যমে ইউএনও মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী আমাকে ডেকে নিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানের একটি খালি চেক দিতে বলেন। আমি স্বাক্ষর করে সেটি ইউএনওকে দিয়ে এসেছি। পরে মেসেজে জানলাম আমার ব্যাংক হিসাবে টাকা দিয়ে তা ওই চেকের মাধ্যমে তা তুলে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামীমের কাছে জানতে চাইলে তিনি আগের সময়ের কাজ উল্লেখ করে প্রথমে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করার পর প্রশাসনিক কর্মকর্তা রবিউল হাসানের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে সরেজমিন বার্তাকে লিখিত তথ্য প্রদান করেন।
এতে বলা হয়, ‘নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্স পুরাতন ভবনের মেরামত প্রকল্পে স্থানীয় ঠিকাদার মেসার্স মিলন এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে পাঁচলাখ ৯৫ হাজার টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রাজস্ব তহবিলের ওই প্রকল্পে ২০২৪ সালের ৮ জুলাই দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং ওই বছরের ২০ আগস্ট কার্য সম্পাদন করা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের তদারকিতে এ প্রকল্পের টাকা উত্তোলনে চেকে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী।’
কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনের নতুন ভবন করার পর পুরাতন ভবনটি অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে উন্নয়নমূলক কাজের কোনো চিহ্নও পাওয়া যায়নি।
এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ঠিকাদার জাগো নিউজকে বলেন, বিগত সরকারের সময় এ উপজেলায় বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প দিয়ে হরিলুট করেছেন ইউএনও আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী ও প্রকৌশলী কাজী কামরুল ইসলাম। সব তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী বর্তমানে বাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবং প্রকৌশলী কাজী কামরুল ইসলাম বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে প্রকৌশলী কাজী কামরুল ইসলাম নিজের জন্য তিন শতাংশ টাকা হাতিয়ে নিতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রকৌশলী কাজী কামরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো সদুত্তর দিতে পারবো না। এটি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী ভালো বলতে পারবেন। আর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শতাংশ হারে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।
যোগাযোগ করা হলে তৎকালীন ইউএনও (বর্তমানে বাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী বলেন, ঠিকাদারের থেকে চেক নিয়ে টাকা তোলার বিষয়টি সত্য। সেই টাকা দিয়ে ওই প্রকল্পের কোনো কাজ হয়নি সেটাও সত্য। আমরা সেই টাকা থেকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুলের নতুন অফিসে ডেকোরেশনের কিছু টাকার কাজ করিয়েছি।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুল বলেন, নির্বাচিত হয়ে আমি মাত্র একমাস অফিসে বসার সুযোগ পেয়েছি। অফিসের ডেকোরেশনের বিষয়টি আমার জানা নাই। তাছাড়া আমিতো অন্য প্রকল্পের টাকায় অফিস ডেকোরেশন করতে বলিনি। আর এ ধরনের প্রকল্প দিয়ে অন্যত্র ব্যয় করার কোনো বিধান আছে বলে আমার জানা নাই।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, আমি ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেছি। এটি আমার যোগদানের আগের ঘটনা। তবুও বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।