
কাজী তানভীর:
৭ই মার্চ কুমিল্লার গুণবতীতে জামায়াতের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক অনুষ্ঠিত এক শালিসি বৈঠকের প্রেক্ষিতে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। শুক্রবার সকালে একটি হামলা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ইউনিয়নের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ শালিসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নির্দেশমতো ২৫শে ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) রাতে মাটিকাটার বুলডোজার নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন মাটিকাটা চক্র। তবে, বে-আইনী মাটি ব্যাবসায়ীদের ট্রাক্টর ও বুলডোজার চলাচলের কারণে কুমিল্লার গুণবতী ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের একমাত্র কাঁচা সড়কটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কারণে স্থানীয় যুবক কাজী ইমরান রাস্তার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন মাটিকাটা চক্রের নিকট। কিন্তু প্রতিক্রিয়ায় মাটিকাটা চক্রটি ইমরানের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ইমরানের কব্জির ও কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। হামলার শেষে ইমরানকে ব্রিজ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে হত্যাচেষ্টা করা হয়। এঘটনায় বিবাদীরা হলেন মাটিকাটা চক্রের সদস্য আবু নসর, সেলিম মেম্বার, মোমিন, আলাউদ্দিন, জাহাঙ্গীর সহ আরও অজ্ঞাত কয়েকজন। এর আগে মাটিকাটা চক্রের সদস্য আলাউদ্দিন ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে স্থানীয়দেরকে ফোন দিয়ে মাটিকাটায় বাঁধা না দিতে বলেন। অথচ, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জনাব মোহাম্মদ সেলিম মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘২৫শে ফেব্রুয়ারীর আগেই এক অভিযানে মাটিকাটা চক্রকে মাটিকাটায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।’ জানা গেছে, ইমরানের উপর হামলাকারী নসর আগেও বেশ কয়েকজনের উপর হামলা করেছেন। তাই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পক্ষে পুরো এলাকাবাসী।
এদিকে ২৫শে ফেব্রুয়ারী রাতে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর ঘটনাটির তদন্তে এসে সত্যতা পেয়েছিলেন চৌদ্দগ্রাম সেনা-ক্যাম্পের ১৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি সেনা টিম এবং কনকাপৈত পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। তবুও আহত ইমরান চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা করতে গিয়ে হয়েছেন প্ল্যানফুল হয়রানির শিকার! ঘটনারদিন রাতে মামলা করতে গেলে চৌদ্দগ্রাম থানার ডিউটি অফিসার বলেন, ‘আপনারা ভালো করে চিকিৎসা করান আগে। তারপর মামলা দিতে আইসেন।’ এরপর চিকিৎসা শেষে ২রা মার্চ মামলা করতে গেলে তদন্ত অফিসার বলেন, ‘আমরা আগে ঘটনার তদন্ত করব। তারপর আপনারা মামলা দিতে আইসেন।’ তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর ৫ই মার্চ মামলা করতে গেলে তদন্ত অফিসার বলেন, ‘আজ সার্ভারে সমস্যা। আপনারা কাল সকালে আইসেন।’ পরদিন ৬ই মার্চ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করানোর পর অফিসার ইনচার্জ বলেন, ‘আজ নয়, আগামীকাল আইসেন।’ পরে সেনাবাহিনী, আইনজীবী এবং সাংবাদিকের সহযোগিতায় সেদিন সন্ধ্যায় মামলা গ্রহণ করে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ।
অপরদিকে, ৭ই মার্চ সকালে ইউনিয়নের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জামায়াতের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক এক শালিসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে হামলাকারীকে দুইটা জরিমানা করা হয়েছে। প্রথম জরিমানা হয় রাস্তার ক্ষতিপূরণ বাবত ২০ হাজার টাকা। এবং দ্বিতীয় জরিমানা করা হয় আহত ইমরানের চিকিৎসা খরচ বাবত ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া বৈঠকে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে মাটিকাটার বিরুদ্ধে ফেসবুকে করা সকল পোস্ট ডিলিট করে দিতে। এই বিচারের রায় ঘোষণার আগেই সাদা দলিলে স্বাক্ষর গ্রহণ করে জামায়াতের নেতৃবৃন্দ, তাই নেতৃবৃন্দের চাপের প্রভাবে বিচারে অসন্তুস্তুষ্টি প্রকাশের শাহস করেনি বাদী ও এলাকাবাসী। তবে, স্থানীয়রা কেউ কেউ সরেজমিন বার্তাকে বলেছে,
‘এই বিচারে সন্ত্রাসীরা উৎসাহ পেয়েছে। সন্ত্রাসীরা ভবিষ্যতে আরও সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে দ্বিধা করবে না।’
‘এই বিচার আমাদেরকে শিখিয়েছে, মার খেয়ে বিচারে হেরে যাওয়ার চেয়ে মেরে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়া ভালো। অতএব এবার থেকে আমরাই মারতে হবে।’
‘জামায়াতের নেতাদের আচরণের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাদের তফাৎ রইলো কী!’।
এঘটনায় একদিকে মামলা করতে গিয়ে পুলিশি হয়রানি, মামলা প্রত্যাহার করার জন্য জামায়াতের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক চাপ, অপরদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে সহিংস সস্ত্রাসীদের উৎপাত। নিরুপায় হয়ে সাধারণ এলাকাবাসী আশু সমাধান হিসেবে বেছে নিচ্ছেন ‘সহিংসতার শিকার হওয়া’র বদলে, ‘সহিংসতার শিকার করা’কে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, করিতে সহিংসতা দূর, পুরো এলাকা হলো সহিংসতায় ভরপুর!