রিপন হাওলাদার
কয়েন ব্যবসার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের অন্যতম ০২ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তর।
মূল্যবান কয়েনে মাত্র ৩০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে দুদিনের ব্যবধানে মিলবে শত কোটি টাকা,এমন অর্থ প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় একটি প্রতারক চক্র।
রাজধানীর উত্তরা বিমানবন্দর থানায় এমন একটি অভিযোগের ভিত্তিতে চাঁদপুর ও ফেনী থেকে প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত থাকা চক্রের দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুরে আগারগাঁও পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তর কার্যালয়ে বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই কর্মকর্তা মো.জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মামলার বাদী মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে ২০১৫ সালে পূর্ব পরিচিত মো. ইউসুফের মাধ্যমে পরিচয় হয় আরেক অভিযুক্ত মানিক মোল্লার। পরিচয়ের সূত্র ধরে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি।
পিবিআই জানায়, প্রথমে চক্রটি মানুষের সঙ্গে সখ্যতা ও বিশ্বাস স্থাপন করে। এজাহারনামীয় অন্যান্য আসামীগণ বাদীকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ধাপে ধাপে মিটিং করেন। মিটিং এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক কয়েন দেখানোর জন্য বাদীকে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মানিক মোল্লার বাসা চাঁদপুরে নিয়ে যান।সেখানে মেটাল কয়েনকে বৈদ্যুতিক আলোর স্পর্শে এনে বিভিন্ন রিফ্লেকশনের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখানো হয়।অভিনব কায়দায় পরীক্ষার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা তৈরি করা হয়।তারপর তাদের এসব কয়েনে বিনিয়োগ করানোর চটকদার কথা বলে অধিক অর্থ আকাঙ্ক্ষায় প্রলুব্ধ করা হয়।
আর এতেই অনেকটা লোভে পড়ে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম।
চুক্তি অনুযায়ী,রফিকুল ইসলাম ধাপে ধাপে মোট ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা তুলে দেন চক্রের সদস্যদের হাতে।একই সঙ্গে চুক্তির কথা কেউ যেন জানতে না পারেন,সে শর্তে শাহ জালাল ও শাহ পরানের নামে শপথ পাড়ানো হয়, রফিকুল ইসলামকে।
পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, বাস্তবে এমন কোনো কয়েনের অস্তিত্ব এখনো কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেকেটা ‘তক্ষক’ ‘সীমান্ত পিলার’-এর মতো এটাও একটি প্রতারণার কৌশল মাত্র।
তিনি জানান,চাঁদপুর থেকে ফেরার পথে সদরঘাটে এসে চক্রের অন্যান্য সদস্যরা সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশের ছদ্মবেশে আসামি ইউসুফ এবং মেটাল কয়েনটি তাদের হেফাজতে নিয়ে মামলার বাদী রফিকুল ইসলামসহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদের একটি নাটক সাজিয়ে শেষে ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে চক্রের আরেক সদস্য সাখাওয়াত এসে কয়েনটি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিতে ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং আরেক সদস্য লিটন ৮০ লাখ টাকা নিলে রফিকুল ইসলামের সন্দেহ হয়। এরপর তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
মামলার সূত্র ধরে পিবিআই অভিযান পরিচালনা করে চাঁদপুর ও ফেনী থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করলেও চক্রের অন্য সদস্যরা এখনো পলাতক রয়েছে।
পিবিআই জানায়, এই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।বিজ্ঞ আদালতের মঞ্জুরকৃত পুলিশ রিমান্ডে আসামীদ্বয় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।