উল্লাপাড়ার ২ পরিবারে ৬ প্রতিবন্ধী অর্থাভাবে খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে
পরিবারে কর্মক্ষম লোক না থাকায় দিন কাটছে ধুঁকে ধুঁকে
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি :
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দুই পরিবারে ১১ সদস্যের মধ্যে ৬ জন প্রতিবন্ধী অর্থাভাবে খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে দিন কাটছে তাদের। এদের মধ্যে ১০ বছরের ২ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও ৪ জন জম্ম গ্রহন সূত্রে প্রতিবন্ধী রয়েছে। পরিবারে কর্মক্ষম লোক না থাকায় দিন কাটছে তাদের ধুঁকে ধুঁকে। বৃহস্পতিবার এক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে আসে সংবাদ কর্মীদের কাছে।
প্রতিবন্ধীরা হলেন, উল্লাপাড়া উপজেলার দূর্গানগর ইউনিয়নের গাড়লগাঁতী গ্রামের মোঃ হোসেন আলীর ২ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছেলে মোঃ মনিরুল ইসলাম (৩০) ও মোঃ মিঠু মিয়া (২৫) এবং উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়নের বাখুয়া গ্রমের শারীরিক প্রতিবন্ধী মোঃ মহির উদ্দিন (৪৫) ও তার দুই সন্তান মোছাঃ মরিয়ম খাতুন (১৬), মোঃ শরিফুল ইসলাম (১৪) এবং মোঃ ছুরমান উদ্দিন (৬৫)। মিঠু নামের ওই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অর্থের অভাবে চোখের চিকিৎসা করতে পারছে না, অন্যরা অর্থের অভাবে খাদ্য ও চিকিৎসা নিতে পারছেন না বলে জানান তারা।
উপজেলার গাড়লগাঁতী গ্রামের অটোভ্যান চালক মোঃ হোসেন আলী জানান, তার বড় ছেলে মনিরুল ইসলামের বয়স যখন ৬ বছর তখন থেকে সে দৃষ্টি শক্তি হারাতে থাকে। প্রথমে আমরা বুঝতে পারিনি। ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা শুরু করলে দীর্ঘ ১০ বছর পর চিকিৎসক বলেন, এ চোখ আর কখনো ভালো হবে না। বড় ছেলে এভাবে অন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন পর ৫ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় মেজো ছেলে মিঠু দৃষ্টি শক্তি হারাতে থাকে। অনেক চিকিৎসা করার পরেও তার দৃষ্টি শক্তি ফেরাতে পারেনি চিকিৎসক। বিদেশে চিকিৎসা করলে হয়তো ভালো হতে পারে এমন ধারণা দেন চিকিৎসক। কিন্তু সেই টাকা জোগার করা ভ্যানচালক গরিব পিতার পক্ষে সম্ভব নয়। যেটুকু জায়গা জমি ছিলো তার সবটুকু বিক্রি করে বড় ছেলেকে চিকিৎসা করে শেষ হয়েছে। মাত্র ৫ ডেসি বসত বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের। সারাদিন অটোভ্যান চালিয়ে যা কামাই হয় তাই দিয়ে সংসার চলে কোনমতে।চিকিৎসার টাকা পাব কোথায়? বড় ছেলে একদম অন্ধ, মেজো ছেলে একটু আবছা আবছা দেখতে পায়। সরকার অথবা কোনো সংস্থা তার ছেলেদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলে হয়তো আমার ছেলেরা দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেতো।
সরেজমিনে গিয়ে উল্লাপাড়া উপজেলার বাখুয়া গ্রামে দেখা যায়, কাঁচা সড়কের পাশে মহির উদ্দিনের খলপা ঘরের বসত বাড়ি। প্রায় আঠারো বছর আগে মহির উদ্দিন তার স্ত্রী লাইলী খাতুনকে বিয়ে করে। গৃহবধু লাইলী খাতুন বলেন, তার গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তান দুজনই জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। শারীরিক প্রতিবন্ধী স্বামী, দুই সন্তান ও প্রতিবন্ধী শশুর ছুরমান আলীকে নিয়ে তার সংসারে খুব কষ্টে দিন কাটে। কষ্টের এই সংসারে তিনি দুই প্রতিবন্ধী সন্তানকে লেখা- পড়া করায়ে শিক্ষিত করতে চান। কিন্তু অভাবের সংসারে তিনি পেরে উঠেন না। বাড়ির বসত ভিটা ছাড়া মাঠে কোনো ফসলের জমি নেই তাদের। তার প্রতিবন্ধী স্বামী মহির উদ্দিন অনেক কষ্টে অটোভ্যান চালিয়ে এবং শশুর ছুরমান আলীর গ্রামের ছোট মুদি দোকান থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই কষ্টে চলে ৬ জনের এ সংসার।
তিনি আরো বলেন, গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই সন্তান তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ালেখা করে। প্রতিবন্ধী দু’জনেরই আলাদা হুইল চেয়ার রয়েছে। বাড়ীতে ভাই বোন হুইল চেয়ারে বসেই সময় পার করে এবং মা ও দাদীর সহযোগিতায় চলাচল করে তারা। গৃহবধু জানান, দুজনকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে বিদ্যালয়ে আনা- নেওয়া করা হয়। প্রতিবন্ধী ৪ জনই সরকারী ভাতার টাকা পায়। বিভিন্ন সময়ে স্বামী ও সন্তানদের চিকিৎসায় এ সব টাকা খরচ করা হয়।
লাইলী খাতুন আরো বলেন, সংসারে অভাবের মাঝেও পড়ালেখা শিখিয়ে সন্তান দুজনকে শিক্ষিত করতে চান তিনি। সংসারে আয় বাড়াতে গরু লালন পালন করতে চান লাইলি। কিন্তু গরু কেনার মতো টাকা তার নেই। তিনি জানান, সরকার বা কোনো সংস্থা ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্য দিয়ে আমাকে গরু কিনে অথবা দোকান দিয়ে দিলে প্রতিবন্ধী সদস্যদের নিয়ে বেঁচে থাকতে পারতাম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ উজ্জ্বল হোসেন বলেন, দৃষ্টি শক্তি হারাতে বসা মিঠুর জন্য কিছু করা যায় কি না এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী পরিবারটির আয় বাড়াতে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা ভেবে দেখবেন তিনি।