
মাঈন উদ্দিন সোহেল, চট্টগ্রাম ব্যুরো- স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা যায় চট্টগ্রামে কোমলমতি শিশুরা সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।এরই জন্যে এডিস মশার বংশবিস্তার হ্রাস করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম এবং মশার ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।
সোমবার (১৭ জুলাই ) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফিরোজ শাহ কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ফিরোজ শাহ কলোনি সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম।
কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম বলেন, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা প্রতিদিন এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পট চিহ্নিত করে সেখানে মশার স্প্রে প্রয়োগ করছি।এরই ফলশ্রুতিতে আজকে স্কুলগুলোতে ও ব্যাপকভাবে ঔষধ প্রয়োগ করি। কেননা কোমলমতি শিশুরাও এডিস মশার সংক্রমণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই মূলত স্কুলগুলোর আশেপাশে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত তিন হাজার মানুষের ওপর বয়সভিত্তিক একটি পর্যালোচনা করেছে। সেখানে দেখা গেছে, শূন্য থেকে ১ বছর বয়সী ৯১ জন, ১ থেকে ৫ বছর বয়সী ১৫২ জন, ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী ৫৭১ জন শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আইইডিসিআর এর তথ্যও বলছে স্কুলগামীদের মধ্যেই ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেশি।
এছাড়াও ডেঙ্গু জ্বরকে নিয়ে রয়েছে নানা জটিলতা হওয়ার ঝুঁকি।বিশেষজ্ঞদের মতে এ বছর ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে জটিলতাও বেশি হচ্ছে। রক্তের প্লাটিলেট দ্রুত কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যকৃৎ আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে, কিডনির কার্যকারিতায়ও কমে যাচ্ছে রোগীদের । পানি আসছে বুকে ও পেটে এবং নিউমোনিয়া দেখা যাচ্ছে। কারও কারও ক্ষেত্রে ঘাম, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসা, রক্তচাপ কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
শিশু বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছে- ডেঙ্গু ধরা পড়লে শিশুকে বিশ্রামে রাখুন, প্রচুর পানি বা তরল খেতে দিন। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল সিরাপ বা বড়ি ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পরপর খেতে দিন। ডেঙ্গুতে ২–৩ দিন পর যখন জ্বর কমে যায় বেশি জটিলতা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসময় তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে যোগাযোগ করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিবেশবিজ্ঞানীরা এডিস মশার প্রজনন নিয়ে ব্যাখ্যা দেন, বর্তমানে এডিস মশা বড়ো বড়ো, সুন্দর দালান-কোঠায় বসবাস করে। স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে এরা ডিম পাড়ে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং একই সঙ্গে মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। ঘরের বাথরুমে বা কোথাও জমানো পানি পাঁচ দিনের বেশি যেন না থাকে। এডিস মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য কোনো সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলা শরীর ভালোভাবে কাপড় দিয়ে ঢেকে বের হতে হবে। প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে। দিনের বেলায় মশারি টানিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে। বাচ্চাদের যারা স্কুলে যায়, তাদের হাফ প্যান্ট না পরিয়ে ফুল প্যান্ট পরিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে। মশা নিধনের স্প্রে, কয়েল ও ম্যাট ব্যবহার করতে হবে। আবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হইত হবে।