
সজল আহাম্মদ খান আখাউড়া ( ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট ছাপানোর শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী মো. মনির হোসেন। উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক মনির হোসেন গত বুধবার নির্বাচনের রিটানিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলামের কাছে দেওয়া এক অভিযোগে এ শঙ্কা প্রকাশ করেন। অভিযোগের অনুলিপি দু’জন মন্ত্রী, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরেও দেওয়া হয়।
এদিকে মো. মনির হোসেনকে কুলাঙ্গার বলা ও ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ব্যবহার করে নির্বাচনী সভা করার বিষয়ে শোকজের জবাব দিয়েছেন দুই জনপ্রতিনিধি। আখাউড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. তাকজিল খলিফা কাজল এবং মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতিন বুধবার রিটানিং অফিসারের কাছে এ বিষয়ে লিখিত জবাব দেন।
মনির হোসেন রিটানিং অফিসারের কাছে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী মো. মুরাদ হোসেন ও তার সমর্থকেরা নির্বাচনী বিধিকে তোয়াক্কা না করে প্রচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি নির্দলীয় এ ভোটে তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর মেয়র মো. তাকজিল খলিফা কাজল নানাভাবে ভোটারদেরকে প্রভাবিত করছেন এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। মোগড়ায় আয়োজিত সভায় মনির হোসেনকে কুলাঙ্গার, ধরখারে আয়োজিত সভায় ডাকাত বলে অবহিত করেন। মোগড়ার সভায় সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন যে মুরাদ হোসেনের আনারস প্রতীকই হলো নৌকা প্রতীক। তাকজিল খলিফা জানান দলের কেউ এ প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে মুরাদ হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণার পৌর কার্যালয়সহ একাধিক ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ব্যবহার করা হচ্ছে। পৌর মেয়র কার্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করে প্রচারণার যোগ দিচ্ছেন। বিধি লংঘন করে রঙিন ডিজিটাল ব্যানার দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বারদেরেক বলা হচ্ছে যে, মুরাদের পক্ষে কাজ করলে এক টন করে টিআর বরাদ্দ দেওয়া হবে। ওই টিআর দিয়ে কোনো কাজ করতে হবে না। সার্বিক বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এদিকে মুরাদ হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণায় ঢালাওভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের নামও ব্যবহার করা হচ্ছে। মুরাদ ও তার সমর্থকরা প্রতিটি সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগে মন্ত্রী মহোদয় তাকে সমর্থন দেওয়ার কথা বলে বেড়াচ্ছেন। অথচ মন্ত্রী মহোদয় কোথাও কোনোভাবে কাউকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেননি কিংবা প্রার্থী হিসেবে কারো পক্ষে কাজ করতে কোনো ধরণের বক্তব্য বিবৃতি দেননি।
এ অবস্থায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা বিরাজ করছে। আলোচনা আছে ভোটের আগে আমার নিকটতম স্বজন কিংবা শুভাকাংখীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হবে। প্রচারণায় বাধা, নির্বাচনী অফিসে হামলার মতো কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রানি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পারিপার্শিক অবস্থায় প্রতিকেন্দ্রে এজেন্ট না দিতে পারাসহ নানা ধরণের শঙ্কা কাজ করছে। আর এজেন্ট দিতে না পারলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ি ভোট ছাপার দিকে এগুবে মুরাদ ও তার সমর্থকেরা।
ওই অভিযোগে মনির হোসেন সরকার সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটি বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিতে রিটানিং অফিসারের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, আশা করি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসহ সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহন করে আমাকে তথা আখাউড়ার লক্ষাধিক ভোটারকে কৃতার্থ করবেন।
এ বিষয়ে রিটানিং অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মনির হোসেনের দেওয়া অভিযোগ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সত্যতা পাওয়া গেলে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ দুই জনপ্রতিনিধি শোকজের জবাব দিয়েছেন বলে তিনি জানান।