
সজল আহাম্মদ খান,আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
মাচায় ঝুলে আছে অসংখ্য ছোট বড় লাউ। দূর থেকে মনে হবে এগুলো তরমুজ কিংবা কুমড়া ঝুলছে। কাছে গেলে দেখা যায় এক নতুন উদ্ভাবন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের তারাগন এলাকায় কৃষক মো. আলাউদ্দিনের সবজি বাগানে গিয়ে দেখা যায় এক অন্যরকম দৃশ্য। কোনো প্রকার কীটনাশক ছাড়া পরিবেশ বান্ধব মালচিং পদ্ধতিতে দেশি জাতের লাউ আবাদ করেছেন। পাশাপাশি বরবটি, পেঁপে, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া আর শসা চাষ করছেন।
ফলন ভালো হওয়ায় এরইমধ্যে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন দেখতে ও পরামর্শ নিতে আসছেন।
নানা প্রজাতির সবজি একদিকে যেমন নিজেদের নিরাপদ খাদ্য হিসেবে পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছে পাশাপাশি ভালো টাকা আয় করছেন তিনি। আলাউদ্দিন ওই গ্রামের মৃত আইনউদ্দিনের ছেলে। পরিবারে স্ত্রী ও ৩ ছেলে রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের তারাগন এলাকায় কৃষক মো. আলাউদ্দিনের সবজি বাগান।
কৃষক আলাউদ্দিন জানান, ছোটবেলা থেকেই সবজি চাষের প্রতি তার বেশ শখ ছিল। পরিবারের অভাব অনটন গোছাতে এক সময় তিনি প্রবাসে চলে যান। দীর্ঘ বছর থাকার পর দেশে ফিরে এসে সবজি চাষ আবাদে ঝুঁকে পড়েন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সবজি উৎপাদনে তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে।
গত এক বছর ধরে বাড়ির পাশেই পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটাতে আধুনিক পদ্ধতিতে লাউসহ নানা প্রজাতির সবজির আবাদ করছেন। সবজি বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় তিনি খুশি।
কৃষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, বাড়ি সংলগ্ন ৪০ শতাংশ জমিতে লাউ বরবটি, পেঁপে, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া শসা আবাদ করেছি। আবাদকৃত জমি তৈরি, বীজ কেনা, চারা রোপণ, জমি বেড়া দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার ও শ্রমিকসহ প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। স্থানীয় বাজারে চলছে সবজি বিক্রি। এ পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকার সবজি বিক্রি হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার লাউসহ বিভিন্ন জাতের সবজি বিক্রি করতে পারবো। মালচিংসহ দেশীয় পদ্ধতিতে সবজি চাষে খরচ কম লাভ বেশি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের তারাগন এলাকায় কৃষক মো. আলাউদ্দিনের সবজি বাগান
কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাউয়ের উপকারিতা যথেষ্ট রয়েছে। লাউয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি, এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আছে। জন্ডিস ও কিডনির সমস্যা দূর করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। পানিশূন্যতা কমায়। হৃদরোগের জন্য উপকারী। ওজন কমাতে সহায়তা করে। ঘুমের সমস্যা কমায়, হজমে সহায়তা করে। ত্বকের জন্য উপকারী। ইউরিনে সংক্রমণ কমায়। মানসিক চাপ কমানোসহ নানা উপকার রয়েছে।
জমিতে লাউয়ের বীজ রোপণ করার পর মাচায় লাউ গাছ উঠার পর অল্প সময়ে ফুল আসতে শুরু করে। গাছে লাউ ধরার অল্প দিনে বাজারে বিক্রি করা যায়। দেশীয় পদ্ধতিতে লাউ চাষ খুব লাভজনক। কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার নেই বলে চলে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের তারাগন এলাকায় কৃষক মো. আলাউদ্দিনের সবজি বাগান
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাচায় ঝুলে আছে অসংখ্য লাউ। পাশাপাশি রয়েছে নানা প্রকারের সবজিও। চলছে পরিচর্যা। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন দেখতে। বিকল্প আয়ের সন্ধানে পরীক্ষামূলক এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে তিনি সফলতা পেয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, এ উপজেলায় দেশীয় পদ্ধতিতে লাউসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষ করছেন স্থানীয় কৃষকরা। সাধারণত অন্যান্য ফসলের তুলনায় সবজি চাষে পরিশ্রম কম ও ফলন ভালো। এতে রাসায়নিক ও কীটনাশক সারের ব্যবহার না থাকায় ক্ষতিকর কোনো প্রভাব নেই। স্থানীয় বাজারে সবজির ভালো চাহিদা রয়েছে। কৃষকরা বাজারে সবজি বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, আলাউদ্দিন একজন আদর্শ কৃষক। তিনি দেশীয় পদ্ধতিতে নানা জাতের সবজি আবাদ করে ভালো সাফল্য পেয়েছেন। বেকার যুবকরা কৃষিতে এগিয়ে আসলে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে উপজেলা কৃষি বিভাগ সব সময় প্রস্তুত আছে। ফলন বৃদ্ধিতে সব সময় কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।