আখাউড়ায় গরমে তৃষ্ণার্ত মানুষের প্রাণ জুড়াচ্ছে শরবত।
সজল আহাম্মদ খান,আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি।
মাথার ওপর প্রহর রোদ। সূর্যের
তাপে সকাল থেকেই প্রকৃতি ও
যেন রুক্ষ হয়ে উঠেছে। কর্ম
ব্যস্ততায়
মানুষের বাড়ছে
কাজের চাপ। তপ্ত গরমের
তীব্রতায় তৃষ্ণার্ত মানুষ ও
প্রাণীকুলে নাভিশ্বাস হয়ে
উঠেছে। চারদিকে একটু শীতল
পরশ লাভের জন্য মানুষেরা
যেন হাঁসফাস করছে। সারা
দেশের ন্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
আখাউড়ায় গত বেশ কিছু দিন
ধরে বইছে তীব্র দাবদাহ। তীব্র
গরমে এক প্রকার অতিষ্ঠ হয়ে
উঠেছে জনজীবন। স্বস্তির
নিঃশ্বাস পেতে যেন বেশ বেগ
পেতে হচ্ছে মানুষকে। ক্লান্তি
আর অবসাদ ভাব কাটাতে
সামান্য প্রশান্তির খোঁজে তারা
যেন ছুটে চলেছেন ভ্রাম্যমাণ
শরবতের দোকানে। তৃষ্ণার্ত
মানুষের এখন প্রাণ জুড়াচ্ছেন
শরবত। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে
এসব দোকানে মানুষের ভিড়
বাড়ছে। পৌর শহরসহ
উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে
ফুটপাতেবসে অনেকেই শরবত
বিক্রি করছেন।
এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে
উপজেলার কোথাও বৃষ্টিপাত
হয়নি। প্রতিদিন বেলা বাড়ার
সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দিনের
তাপমাত্রা।
সরেজমিনে পৌর শহরের সড়ক
বাজার, রেলওয়ে স্টেশন,
খড়মপুর, উপজেলার মোগড়া
বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে
দেখা যায় ভ্রাম্যমাণ শরবতের
দোকান বসেছে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব
দোকানে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন
ধরনের শরবত।
তৃষ্ণার্ত লোকজনরা শরবত পান
করে তাদের প্রাণ জুড়াচ্ছেন।
একাধিক শরবত বিক্রেতা
জানান, মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে
চিনি, লেবু, তোকমা,
ইসবগুলের ভুসি, শাহিদানা,অ্যালোভেরা ও উলটকমল দিয়ে
শরবত তৈরি করা হয়।
তাছাড়া ফিল্টারের পানির সাথে
বরফ দেওয়া হয়। ওইসব দিয়ে
তৈরী করছেন
স্বাস্থ্য সম্মত শরবত।
এই গরমে এ শরবতের চাহিদা
কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি
গ্লাস শরবত বিক্রি
হচ্ছে
১০ টাকায়। প্রত্যেক
শরবতওয়ালা দিনে প্রায় ২শ
থেকে ২৫০ গ্লাস শরবত
বিক্রি করছেন।
সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী মো:
এনামুল কবির বলেন, গত
কয়েকদিন ধরে ভ্যাপসা
গরম ও
লোডশেডিংয়ে
জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
গরমের কারনে ঠিকমতো ক্লাস
করা
যাচ্ছে না। বাড়িতে পড়াশুনা ও
করতে পারছেন না। তাছাড়া
এই তীব্র গরমে
বাইসাইকেল চালিয়ে কলেজে
আসতে খুবই কষ্ট লাগছে। তাই
কলেজ শেষে লেবুর শরবত
খেয়ে তৃষ্ণা মেটাচ্ছি।
মো: পারভেজ হাসান বলেন,
অতিরিক্ত গরমে কাজ করা খুবই
কষ্টকর হয়ে উঠছে। তাই
শরবত পান করায় এখন ভালো
লাগছে।
অটো রিকশা চালক মোঃ সুরুজ
মিয়া বলেন, এই গরমে রিকশা
চালানো খুবই কষ্টকর।
রিকশা চালালে প্রচুর পিপাসা
লাগে। এই
টিউবওয়েলের পানির
পাশাপাশি
ভিন্ন স্বাদের এই শরবত সময়
পেলে তিনি পান করেন বলে
জানায়। মো: আলী মিয়া
এই গরমে খোলা আকাশের
নিচে ফুতপাতে বসে মালামাল
বিক্রি করতে খুবই পিপাসা লাগে।
শরীরের ক্লান্তি দূর করতে প্রতিদিন শরবত পান করছেন বলেন জানায়।
রিকশা চালক কাজল বলেন
সারাদিন রিকশা চালাই।শরীরকে ভালো রাখার জন্য
শরবতের ওপর কিছু আছে বলে
মনে করি না। তাই যখনই ক্লান্ত
হই, তখনেই
ফুটপাতের দোকানে এসে
শরবত পান করি। এই শরবত
খেয়ে আমাদের এখন পর্যন্ত
কোন
সমস্যা হয়নি। বরং যখন খান
তখন খুবই ভালো লাগে।
শ্রমিক মৌ: বাবুল মিয়া
বলেন তীব্র গরমে লেবুর শরবত
শরীরে অন্যরকম আমেজ নিয়ে
আসে। এক গ্লাস পান
করলেই প্রশান্তি পাই।
শরবত বিক্রেতা আল-আমিন
বলেন, এই গরমে তার শরবত
বিক্রি বেড়েছে। প্রতিদিন
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেড়
থেকে দু’শ গ্লাস শরবত বিক্রি
হয়। গরমের
কারণে লেবু ও ট্যাংক মিশ্রিত
শরবতের চাহিদা বেড়ে বিক্রি
হচ্ছে বেশী।
তিনি আরও বলেন চিনি আর
লেবুর দাম বেড়েছে। কিন্তু
শরবতের দাম বাড়েনি। খরচ
বাদে দৈনিক ৪ শ টাকার উপর
আয় হয় বলে জানায়। শরবত
বিক্রির আয়ে চলে তার
জীবিকা।
শরবত বিক্রেতা কুদ্দুস মিয়া
বলেন গত কয়েক মাস ধরে হাট
বাজারে ভ্যান
গাড়িতে করে শরবত বিক্রি
করছেন। গরম বেশী থাকলে
শরবতের চাহিদা ভালো থাকে।
বিক্রিও ভালো হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার
পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মো:
হিমেল খান বলেন,
গরমে পানি খাওয়া আমাদের
শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
তবে অস্বাস্থ্যকর পানি
পান করলে শরীরে নানা রোগ
হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। লেবুর
যে শরবত রাস্তার
পাশে কিংবা ফুতপাতে বিক্রি
হচ্ছে অনেকাংশে সেগুলো
স্বাস্থ্যসম্মত নয়।