

সজল আহাম্মদ খান,আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় ইতিমধ্যে এ মৌসুমের ইরি বোরো ধান কাটা ও ঘরে তোলার কাজ শেষ হয়েছে। জমিতে ধানের বাম্পার ফলন ও বাজারে বিক্রিতে দাম ভাল পাওয়া খুশি স্থানীয় কৃষকরা। এদিকে বোরো ধান ঘরে তোলা শেষ না হতেই কৃষকরা উৎসাহ নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা আউশ আবাদে ঝুঁকছেন। এ চাষে সার বীজসহ সরকারি সহায়তা পাওয়ায় ইতিমধ্যে কৃষকরা রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে আউশ ধান আবাদ কৃষকরা এক প্রকার ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাছাড়া উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে এ চাষের আবাদও। একই জমিতে ইরি বোরো, আমন ও আউশসহ ৩টি ফসল হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে পৌর শহরসহ উপজেলায় প্রায় ১৪০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের চাইতে ২০ হেক্টর বেশী। এরইমধ্যে সরকার আউশ ধান আবাদের জন্য ৫শ কৃষকের মাঝে জনপ্রতি ২০ কেজি সার ও ৫ কেজি বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করে। কৃষি কর্মকর্তারা জানায়, আউশ হল একটি বর্ষালী ও লাভজনক ধান। এই চাষ আবাদে খরচ তুলনামূলক অনেক কম হয়। সেইসাথে ফলন ও ভালো হয়। তাছাড়া এই ধানের আবাদ তুলে পুনরায় ওই জমিতে সহজে রোপা আমন ধানের চাষ করা যায়। এতে আমন আবাদের কোন ক্ষতি হয় না। তবে যথা সময়ে আকাশের বৃষ্টিপাত হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা আনন্দে আউশ ধান রোপণ শুরু করছেন। এদিকে কৃষি অফিস
বলছেন তারা জমিতে রোগবালাই ও পোকামাকড় হতে ফসল রক্ষায় মাঠে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ধान কৃষকদেরকে সার্বিক ভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। সরেজমিনে পৌর এলাকায় তরাগন, উপজেলার নূরপুর, হীরাপুর, কুড়িপাইকা সাতপাড়া, নুনাসারসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় কৃষকরা আউশ ধান আবাদে জমি প্রস্তুত, চারা উত্তোলন ও রোপনের কাজ করছেন। কৃষক মো. আবু তাহের মিয়া বলেন, গত ২০ দিন আগে তার বোরো ধান কাটা, মাড়াইসহ শুকানো কাজ শেষ হয়েছে। নানা প্রতিকূলতা অপেক্ষা করে এ মৌসুমে তার জমিতে
বাম্পার ফলন হয়েছে। ১০ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ করায় প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২২ মণ ধান পেয়েছেন। তাছাড়া ধান বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় তিনি বেশ খুশি। এদিকে কৃষি অফিসের পরামর্শে ও সরকার কর্তৃক বিনামূল্যে সার বীজ পাওয়ায় আউশ ধান আবাদ করছেন। কৃষক মো: আলী মিয়া বলেন গত কয়েক বছর ধরে তিনি ইরি বোরো ও আমন ধান চাষ করে আসনে। তবে জমিতে বোরো ধান আবাদে তুলনামূলক খরচ বেশী হলে ও আমনে এর অর্ধেক
হয়। কিন্তু আউসে আরো কম হচ্ছে। কারণ বর্ষা মৌসুমে আউশ ধান চাষে সেচের তেমন প্রয়োজন হয় না সে সময় ভালো বৃষ্টিপাত থাকে যা ধানের জন্য খুবই ভালো হয়। তাছাড়া সারসহ অন্যান্য উপকরনও কম লাগে। এই আবাদটি অধিক লাভজনক হওয়ায় ২ বিঘা জমিতে চাষ করছেন। গত বছর এ চাষ করে তিনি বেশ লাভবান হয়েছেন। কৃষক মো: রেনু মিয়া বলেন, সার প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হয়।
বোরো মৌসুমে ১২ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল
আবাদ করেন। সেচ সুবিধা ভালো থাকা ও সময়মতো সারসহ অন্যান্য উপকরণ পাওয়া এবং কৃষি অফিসের সার্বিক তদারকিতে ভালো ফলন হয়েছে। ধান বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় এ চাষে তিনি অনেকটাই লাভবান বলে জানায়। সরকার কর্তৃক দেওয়া বিনামূল্যে সার বীজ পাওয়ায় ২ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল আউশ আবাদ করেন। এক সময় দুই ফসল ধান চাষ করা হতো। কৃষি অফিসের পরামর্শে গত কয়েক বছর ধরে তিনি বোরো আমনের পাশাপাশি আউস ধান আবাদ
করে লাভবান হচ্ছেন। কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে আউস ধান আবাদের। কৃষি অফিস থেকে সার বীজ পেয়েছেন বলে জানায়। তিনি আরও বলেন বর্ষা মৌসুমে আউশ ধান চাষের সময় পানি সেচের তেমন প্রয়োজন হয় না। ধানের ফলন তুলনামূলক ভালো হয়। গত মৌসুমে তিনি এক বিঘা জমিতে ১৮ মণ ধান পেয়েছেন। এবছর তিনি ২ বিঘা জমিতে আউশ ধান আবাদ করবেন বলে জানায় । উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, যথাসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় ও সেচ সুবিধা ভালো থাকায় আউশ ধান আবাদ শুরু করেছে কৃষকরা। এ উপজেলায় আউশ ধানের আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৌর শহরসহ উপজেলায় ৫শ জন কৃষকের মাঝে আউশ আবাদের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রনোদনা হিসেবে দেওয়া হয়।