চট্টগ্রাম ব্যুরো- দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণার আমেজে চট্টগ্রাম জুড়ে চলছে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা। কিন্তু চট্টগ্রাম-৯ আসনের চিত্রটা ছিলো ভিন্ন।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে দূর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালের লাইফসাপোর্টে আশংকাজনক অবস্থায় ভর্তি হয়েছেন যুবলীগ নেতা শাহজাহান উমাইর ।এ ঘটনায় এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে পরিবেশ। গুঞ্জন রয়েছে নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে ।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত শাহজাহান উমাইর এর ভাই সরেজমিন বার্তাকে বলেন, ‘আমার ভাইকে যে বা যারা এভাবে কষ্ট দিয়ে মেরেছে তাদের সকলের বিচার চাই। আর কিছু না, শুধু তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার তিনটা ভাতিজা আছে । ভাইয়ের কিছু হলে তাদের কি হবে?’
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পূর্বশত্রুতার জেরে সামান্য কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে শাহজাহান উমাইর নামে ওই ব্যক্তির ওপর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়।
আইসিইউ বেড থেকে ভিডিও বার্তায় আহত উমাইর বলেন, ‘সবাইকে আমি চিনি না। জীবন,শাহী সহ আরো অনেকে মিলে কদমতলীর মহসীন ভাইয়ের নেতৃত্বে এই হামলা করে।’
গুরুতর আহত উমাইর এর বার্তায় উঠে আসে নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামিলীগ এর সাধারণ সম্পাদক মহসীনের নেতৃত্বেই মূলত এ হামলা চালানো হয়।
প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানায়, মহসীনের নির্দেশে হামলায় অংশ নিয়ে একে একে উমায়েরকে ছুরিকাঘাত করতে থাকে জীবন, শাহনেওয়াজ,ওমর, শাহী সহ বেশ কয়েকজন। কদমতলী এলাকায় অভিযুক্ত সেই মহসীনের বাসার নিচে এই নারকীয় ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা আরো জানা যায়,ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় এলাকায় প্রভাব বিস্তারকারী মহসীনের নির্দেশে তার অনুসারীরা দা-ছুরি নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা করে। হামলার সময় প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা প্রতিহত করতে চাইলে তাদের সাথেও ধ্বস্তাধ্বস্তির হয়েছে বলে জানা যায়।
আরো জানা যায়, ঘটনার আগ মুহুর্তে হামলার শিকার শাহজাহান উমাইর এর সাথে ফোনে কথা হয়েছিলো স্থানীয় কাউন্সিলর জাবেদের। ফোনে কথা শেষ হওয়ার পরপরই ঘটে হামলার ঘটনা। অভিযুক্ত মহসীন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাবেদের অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
এই ঘটনায় ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাবেদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উমাইর ছেলেটা ওই এলাকায় গিয়েছিলো ওইখানে কিছু ছেলের সাথে ব্যক্তিগতভাবে কিছু একটা নিয়ে বাড়াবাড়ি হওয়ায় ছুরিকাঘাতের ঘটনাটি ঘটে। এতে কোনো রাজনৈতিক কিংবা দলীয় বিষয়ের সম্পৃক্ততাও নেই।
কাউন্সিলর জাবেদ মুঠোফোনে কথা বলার বিষয়টি সহ বিস্তারিত ঘটনার বিবরণে বলেন, ‘তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে মহসীন সমঝোতা করার জন্যে উমাইরের কাছে গিয়েছিলো, তাকে আঘাত করতে যায়নি।’
ঘটনার জন্য উমাইরকে মাতাল দাবী করলেও অভিযুক্ত সেই মহসীন মুঠোফোনে বলেন, ‘শাহী নামের যে ছেলেটা ছুরি মারছে তার সাথে প্রচুর গালাগালি হচ্ছিলো। উমাইর প্রচুর পরিমাণে মাতাল ছিলো বলে মনে হইছে আমার। আমি অনেকবার ডাকাডাকির পরও একবার চলে গেলেও পুনরায় ফিরে এসে মারামারি করে। আমি পুনরায় তাদের সমঝোতা করার জন্যে উদ্যোগ নিলাম।কিন্তু ততক্ষণে শাহী উমাইরকে ছুড়ি মেরে দিয়েছে। আমি এ ধরণের কোনো ঘটনার সাথে জড়িত না।ঘটনাটা আমার সামনে ঘটাতে হয়তো বা আমার নামটা চলে আসতেছে।’
প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানায়, ঘটনাস্থল থেকে ঘটনা ঘটার ঠিক আগ মূহুর্তেই উমাইর কল করেছিলো কাউন্সিলর জাবেদকে। উমাইরের মোবাইল থেকেই মহসীনের সাথে কথা বলানোর চেষ্টা করা হয়,কথাও বলেন মহসিন। কাউন্সিলর জাবেদের সাথে মহসিনের কথা বলার পরপরই হামলা হয়েছে উমাইরের ওপর।মহসিনের সাথে কি কথা হয়েছিলো কাউন্সিলর জাবেদের? মুঠোফোনে কাউন্সিলরের সাথে কি কথা হয়েছিলো তা নিয়ে জলঘোলা সহ নানা ধরনের গুঞ্জনে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে এলাকায়।
উমাইরের মুঠোফোনে মহসিনের সাথে কথা বলার বিষয়ে অস্বীকার করলেও মহসিনের সাথে পরবর্তীতে এ বিষয়ে কথা বলার বিষয়টি জানান কাউন্সিলর জাবেদ।
জানা যায়,মামলার প্রধান আসামী মহসিন এখনও পর্যন্ত রয়ে গেলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন সরেজমিন বার্তাকে বলেন, ‘এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আসামী জীবন কে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ।অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’