জমির মালিকানা নেই, তবুও তারা জমির মালিক। ভুয়া তথ্য আর ভবিষ্যতের রঙ্গিন স্বপ্ন দেখিয়ে চড়া মূল্যে বিক্রি করছে শত শত দোকান । ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র না নিয়েই অসদুপায়ে রীতিমতো প্রতারণা করে যাচ্ছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে।
জানা যায়, যৎসামান্য জমি নিজেদের কেনা নয়। অথচ প্রচার করা হচ্ছে ওয়ারিশ সূত্রে প্লটের মালিকানা । কিন্তু মালিকানার দলিল দেখতে চাইলেই নানা টাল বাহানা। সবকিছুই জানে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। কিন্তু তারাও চুপ। এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত রাজউকের কতিপয় দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালী কর্মকর্তা। তাদের সমর্থন নিয়ে উত্তর সিটি কর্পোরেশন ১ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আফসার উদ্দিন খান এবং মোহাম্মদ শরিফুর রহমান এ রকম অবৈধ কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপদ সড়কের ৮৬,৮০,৭৪,৫৭,৫৪,৫৫,৫২,৫০,৪৭,৪৮ নম্বর প্লট এবং সেক্টর ১৩ এর সোনারগাঁও জনপদ অংশের ৮১,৭৭,৭৫,৬৭,৬৯,৬৩,৬৫ নং প্লট দখলে নিয়ে বিশাল ফার্নিচার মার্কেট, গাড়ির গ্যারেজ ,খাবার হোটেল, কাঁচা বাজার ভাড়া দিয়ে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। দুই কমিশনারের সাথে রাজউকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ছাড়াও উত্তরার পুলিশ প্রশাসনের তিন কর্মকর্তা এই টাকার ভাগ নিয়েছেন।
তাদের মদদে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল, সাবেক হরিরামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুত্র যুবলীগ নামধারী নেতা নাজমূল, টঙ্গীর অস্ত্র ও নারী ব্যবসায়ী বাপ্পি, চিহ্নিত মাদক ও নারী ব্যবসায়ী ইউনুস দুর্জয়,জহির, খোকন,১ নং ওয়ার্ড(উত্তরা) আওয়ামীলীগের স্থগিত কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান হোসেন রিকু ও শ্রম বিষয়ক সম্পাদক তাজুল ইসলাম জজ, নামধারী যুবলীগ নেতা কবির হাসান, ছাত্রলীগের পশ্চিম থানার সভাপতি সাকিলুজ জামান বিপুল, সাবেক মেম্বার আবুল হোসেন,কালু,সাজ্জাদ, এবং বাবু ওরফে গোজা বাবুরা প্লটগুলো থেকে মাসে মাসে ভাড়া তুলে নিচ্ছেন।
অভিযোগ আছে, হরিরামপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোস্তফা মেম্বারের সাথে আতাত করে ১১ নম্বর সেক্টরের একটি বিতর্কিত প্লটের কাঁচাবাজার থেকে জামানত হিসাবে ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সরকার দলীয় কাউন্সিলর ৪৪ নং ওয়ার্ডের কমিশনার মো.শফিকুল ইসলাম(শফিক)। অবৈধ ঐ বাজার থেকে কোটি টাকা ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে তিন কমিশনার মো.শফিকুল ইসলাম, আফসার উদ্দিন খান এবং মোহাম্মদ শরিফুর রহমান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর মো.শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে,তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে নারাজ।
এছাড়াও কমিশনার আফসার খানের বিরুদ্ধে উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপদ সংলগ্ন লেক দখল করে চাচাতো ভাই রশিদের নামে প্লট তৈরি( প্লট নং ৬২) এবং জমির আলি নামের এক ব্যক্তির ৭ নম্বর সেক্টরের ৭৩ ও ৭৫ নং প্লট (সড়ক ৭) দখল করার অভিযোগ রয়েছে। উক্ত প্লটটিতে পালিত ক্যাডার মাজেদ খানের নিয়ন্ত্রণে ৭০-৮০ টি দোকান নির্মাণ করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দখলের এই কাজে কমিশনারকে সাহায্য করেছে রাজউক উত্তরা প্রকল্পের এ্যাসিসটেন্ড ডাইরেক্টর (ভূমি-২) সামসুল হক মিল্কি।
আর ৫১ নং ওয়ার্ড কমিশনার মোহাম্মদ শরিফুর রহমান জানান, ফার্নিচার মার্কেটের চাঁদাবাজির সাথে আমি জড়িত না। এই সম্পত্তি হচ্ছে রাজউকের। বিএনপি সরকারের আমলে প্লটগুলো টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু আর্মি সরকার (তত্ত্বাবধায়ক) তা বাতিল করে। পরবর্তীতে টেন্ডার গ্রহীতারা রাজউকের বিরুদ্ধে মামলা করে। এবং কিস্তি না দেয়ার কারণে লিজ বাতিল হয়। এরপর খালি প্লট গুলোতে মানুষজন দোকানপাট গড়ে তুললে কিছুদিন পর পর রাজউক তা উচ্ছেদ করে।
তিনি আরও জানান, প্লটগুলো বাণিজ্যিক। এ গুলো কাউকে বরাদ্দ দেয়া হয়নি। পূর্বে যারা দোকানপাট করে খেত তারাই নতুন করে ব্যবসা খুলে বসেছে। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর রাজউক যদি উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে খালি প্লটগুলোর দায়িত্ব আমাকে বুঝিয়ে দিত তাহলে আমি প্লটগুলোতে কোন প্রকার অবৈধ স্থাপনা গড়তে দিতাম না।
অন্যদিকে অভিযুক্ত কমিশনার মো. আফসার উদ্দিন খান জানান, আসছে সম্মেলন ও ওয়ার্ড নির্বাচনের কারণে প্রতিপক্ষের লোকজন আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করছে। ফার্নিচার মার্কেট গুলো আমার ওয়ার্ডের নয়। এ ছাড়া রশিদ নামের আমার কোন চাচাত ভাই নেই এবং আমি কোন প্লট দখলের সাথে জড়িত না।
অপরদিকে রাজউক উত্তরা প্রকল্পের এ্যাসিসটেন্ড ডাইরেক্টর (ভূমি-২) সামসুল হক মিল্কির সাথে মুঠোফোনে উক্ত অভিযোগের বিষয়ে তার মতামত জানতে চাইলে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেয়। পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরা পশ্চিম থানা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, এদের কোন দল নেই, এরা নব্য আওয়ামী ও যুবলীগের কিছু হাইব্রিড নেতা। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী, রাজউকের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে তারা এ দখল প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। এদের কারণে দলের সম্মান মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
তিনি জানান, বিএনপির কয়েক নেতার সাথেও এদের যোগসাজশ রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিটি দোকান থেকে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা করে অগ্রিম নিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্র। আবাসিক এলাকার ভেতর অবৈধভাবে মার্কেট তৈরি করায় এলাকার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, উত্তরা সোনারগাঁও জনপথ সড়কের উভয় পাশে রাজউকের জমি দখল করে মার্কেট তৈরি করার সময় এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে রাজউক বাধা দিলেও পরে রহস্যজনক কারণে কর্মকর্তারা চুপ হয়ে গেছেন।
© 2013 All Rights Reserved By সরজমিনবার্তা
0 Comments